মাদকের কালো শক্তি ধ্বংস করে দিতে পারে একটি যুবকের জীবনকে, সেই সঙ্গে তার পরিবারকে, তার সমাজকে এমনকি পুরো দেশকে। কয়েক বছর আগেও গ্রামগঞ্জে ছিল না মাদকাসক্তির প্রকোপ। তবে এখন মাদকাসক্তির সংখ্যা গ্রামগঞ্জে মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। এখন প্রায় প্রতিদিন গ্রামের কোনো না কোনো বাড়িতে ঘটছে মারামারি, বিশৃঙ্খলা মাদকাসক্ত ছেলে, বাবা অথবা পরিবারের অন্য কারও সঙ্গে।
এবার ছুটিতে গ্রামে এসে বিষয়টি নজর কেড়েছে যে গ্রামের তরুণ যুবকরা বেশিরভাগই ঝুঁকেছে মাদকাসক্তির দিকে। যে ছেলেটা রোজ সকালে ঘুম থেকে ওঠে নাশতা শেষে সরাসরি স্কুলের ক্লাসরুমে যেত, সে ছেলেটি এখন ক্লাসে প্রবেশের আগে ধূমপান করে ঢুকছে অথবা ক্লাসের পরে বন্ধুদের সঙ্গে ধূমপান করছে। গ্রামের বয়ঃবৃদ্ধদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে থাকতে থাকতেই শুরু হয় এই আসক্তি। প্রথমে বিড়ি দিয়ে এই আসক্তি শুরু হলেও, শেষ পর্যন্ত পৌঁছায় ভয়ংকর মাত্রার দিকে। কয়েকদিন পর যখন সেই ছেলেটি বিড়ি থেকে সিগারেট, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে যায়, তখন সে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে হাজারো যুবক ও তার পরিবারের লালন করা স্বপ্নের শেকড়।
গাঁজা, ফেনসিডিল, চরস, ভাং, গুল, জর্দা, হেরোইন, প্যাথেডিন, মদ, ইয়াবাসহ সবই মাদকের অন্তর্ভুক্ত। যখন কেউ এসব দ্রব্যাদির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তখনই তাকে মাদকাসক্ত বলা হয়। গ্রামের অধিকাংশ যুবক এসব জেনে না জেনে নির্বিচারে ঝুঁকে পড়ছে মাদকাসক্তির দিকে। গ্রামে এই আসক্তি ছোঁয়াচে রোগের মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে। এই আসক্তি যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে কয়েক বছর পর লোকালয়ে মাদকাসক্তের এই ছোঁয়াচে রোগটা মহামারির রূপ ধারণ করবে।
আসলে গ্রামের যুবকদের মাদকাসক্তির দিকে পরিচালিত করার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলোÑসামাজিক অস্থিরতা, উত্তেজনা, একঘেয়েমি, একাকিত্ব, দুর্বল পারিবারিক সম্পর্ক। তবে মাদকাসক্তদের সংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ, মাদকের সহজলভ্যতা। একজন ছেলে চাইলেই হাতের কাছে মাদকদ্রব্য পাচ্ছে হয়তো তার বন্ধুর মাধ্যমে নতুবা সে নিজেই সংগ্রহ করতে পারছে। কিন্তু আমি পারিবারিক দুর্বল বন্ধনকেই দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করব। কেননা এখন গ্রামের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েছে।”ছেলে কোথায় যাচ্ছে? কী করছে? কখন বাসাতে আসছে? বাড়ির বাইরে কোথায় সময় কাটাচ্ছে? কেমন বন্ধুদের সঙ্গে মিশছে?”এসব কোনো খোঁজখবর নেন না এখনকার গ্রামের মা-বাবা। এমন সন্তান মাদকাসক্তের দিকে ধাবিত হবে এটাই স্বাভাবিক। গ্রামের মা-বাবার মাথায় আরও একটা চিন্তা এখন ওষুধের মতো ঢুকে গেছে, ছেলে একটু বড় হলেই তাকে বিদেশ পাঠাবে শ্রমিক হিসেবে। তাদের ছেলেরা যে শিক্ষিত হবে এ চিন্তা দিন দিন লোপ পাচ্ছে।
গ্রামের পরিবারের সদস্যদের উদাসীনতার শিকল দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পরিবারের সন্তান ও পরিবারকে ছেয়ে ফেলছে মাদকাসক্তির কালো ছায়া। শুধু পরিবারকে নয়, মাদকের কালো থাবা ধ্বংস করে দিচ্ছে একটি সমাজকে, একটি জাতিকে এবং পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে এটি বৃহৎ আকার ধারণ করে একটি ভবিষ্যৎ প্রজš§কে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। এরূপ পরিস্থিতিতে আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে এবং গ্রামের সব মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। নতুবা গ্রামে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে; যার ফলে দেশে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। পরিশেষে আমরা আমাদের গ্রামের সব মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করব; তবেই গ্রাম হবে নির্মল বায়ুর মতো। আমরা চাই গ্রাম কিংবা শহর সব যুবক দক্ষ ও শিক্ষিতভাবে গড়ে উঠবে এবং দেশের উন্নতি ও অগ্রগতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
মো. আব্দুল ওহাব
শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়