Print Date & Time : 15 August 2025 Friday 9:07 am

গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে মান নিশ্চিত হোক

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘এক মাস না পেরোতেই টাঙ্গাইলে সড়কে ধস’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা পাঠকের দৃষ্টিগোচর হয়েছে হয়তো। প্রতিবেদনটির তথ্যমতে, ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের হালুয়াপাড়া-কর্মকারপাড়া সড়কের নির্মাণকাজে গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে এক মাসের মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে সড়কের অংশবিশেষ ধসে পড়েছে। নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ করায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে সড়ক নির্মাণের অভিযোগ নতুন নয়। এক্ষেত্রে টাকা বাঁচিয়ে বাড়তি মুনাফা করতেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ শঠতার আশ্রয় নিয়ে থাকে বলে নানা সময় জানা যায়। এক্ষেত্রে দায় শুধু ঠিকাদারের একার নয়। সংশ্লিষ্ট যে কর্তৃপক্ষ সড়কগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নেয়, তাদের দায় কোনো অংশে কম নয়। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন সরকারি দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের এক্ষেত্রে অনেক দায় রয়েছে বৈকি।

সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ঘাটে চাঁদা দেয়া এমনকি কর্তৃপক্ষের অনেক কর্তা ব্যক্তিকে ম্যানেজ করার জন্য উৎকোচ দেয়া হয়ে থাকে বলে নানা সময় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করি।

দেশে সরকারি ক্রয় বিষয়ে যে আইন ও বিধিমালা রয়েছে, তদানুসারে সর্বনি¤œ দরদাতাকে কাজ দিতে হয়। কিন্তু অনেক ঠিকাদার কাজ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইচ্ছে করেই কম দাম দেখিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজ পেয়ে থাকেন বলেও জানা যায়। এমনটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সাধারণত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) গ্রামাঞ্চলের সড়কগুলো নির্মাণ করে থাকে। এটি বর্তমানে খুবই সক্ষম একটি সংস্থা। দেশব্যাপী তাদের বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে। প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন শ্রেণির কয়েক লাখ সড়ক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত। বিশাল অঙ্কের উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু গুণগত মান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এলজিইডি এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে বৈকি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এলজিইডির সড়কে পিচ ঢালাই করার এক সপ্তাহের মধ্যেই তা উঠে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে মাটির রাস্তা যথাযথভাবে পিচ ঢালাইয়ের উপযোগী না করেই কার্পেটিং করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে বৃষ্টির মধ্যেও কার্পেটিংয়ের বিষয়ে সচিত্র প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এমন প্রক্রিয়ায় সড়ক নির্মাণ কোনোভাবেই টেকসই হতে পারে না। এসব বিষয় যথাযথভাবে তদারকির মাধ্যমে সড়কের গুণগত মান নিশ্চিত করা আবশ্যক। জনগণের করের অর্থ যাতে পূর্ণাঙ্গ উপায়ে ব্যবহƒত হয়, সে বিষয়ে লক্ষ্য প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক কর্মীর একান্ত দায়িত্ব। তারা এ দায়িত্ব পালনে মনোযোগ্য হবেন বলেই নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা।