Print Date & Time : 17 August 2025 Sunday 8:20 pm

গ্রাম পর্যন্ত করদাতার সন্ধানে এনবিআরের জরিপ

রহমত রহমান: গ্রাম পর্যন্ত প্রতি ঘরে নতুন করদাতার খোঁজে আবার জরিপ শুরু হচ্ছে। জরিপে গৃহসম্পত্তির দিকে বিশেষ নজর থাকবে। এছাড়া ইউনিয়ন থেকে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত ট্রেড লাইসেন্স, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিসহ সব সেবা প্রদানকারী সংস্থার তথ্য কাজে লাগিয়ে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক করদাতা খুঁজে বের করা হবে। এবার বহিরাঙ্গন ও অভ্যন্তরীণ এ দুই পর্যায়ে জরিপ হবে। এনবিআরের এবারের লক্ষ্য নতুন ১২ লাখ করদাতা খুঁজে বের করা। জরিপ টিমে এবার নারী শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানো হবে। আগের যে কোনো বছরের চেয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য বিশ্লেষণ করে করদাতা বের করার নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান। সে অনুযায়ী সম্প্রতি এনবিআর থেকে প্রতিটি কর অঞ্চলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জরিপ কার্যক্রম শুরু করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রে জানা যায়, জরিপ কার্যক্রম শুরু করতে এরই মধ্যে এনবিআরের কর জরিপ পরিদর্শন শাখা থেকে সব কর অঞ্চলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে সেপ্টেম্বর থেকে জরিপ কার্যক্রম শুরু করতে বলা হয়েছে। প্রতিটি কর অঞ্চলকে নতুন করদাতা শনাক্তে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। কর অঞ্চলের ভৌগোলিক সীমানা, জনসংখ্যা, অধিক্ষেত্রাধীন এলাকার অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে এ লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। এবার অভ্যন্তরীণ ও বহিরাঙ্গনÑএ দুই ধরনের জরিপ কার্যক্রম চালাতে বলা হয়েছে। করজাল সম্প্রসারণ ও অধিকসংখ্যক নতুন করদাতা শনাক্তের উদ্দেশ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান এ দুই ধরনের জরিপ চালাতে নির্দেশ দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, প্রতিটি কর অঞ্চলে সীমিতসংখ্যক জনবল রয়েছে। ফলে প্রতিটি ঘরে গিয়ে জরিপ কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়। সেজন্য বিগত জরিপে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রতি টিমে কয়েকজন শিক্ষার্থী রাখা হয়। এবার জরিপ টিমে কমপক্ষে একজন নারী শিক্ষার্থীসহ তিন শিক্ষার্থী রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া এবার জরিপে গৃহসম্পত্তির দিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। বলা হয়, মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বেড়েছে। সেজন্য সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যন্ত অসংখ্য পাকা বাড়ি ও ফ্ল্যাট নির্মিত হয়েছে। এদের মধ্যে অনেক একক ও যৌথ মালিকানার করযোগ্য ব্যক্তি থাকলেও তারা করজালের বাইরে রয়েছেন। ‘গৃহসম্পত্তি’ একটি উদীয়মান খাত। সে জন্য নতুন করদাতা শনাক্তে গৃহসম্পত্তি খাত বা যাদের পাকা বাড়ি, ফ্ল্যাট আছে, তাদের বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এসব সম্পত্তির মালিকের তথ্য বহিরাঙ্গন ও অভ্যন্তরীণ দুইভাবে যাচাই করলে বহু করদাতা বের হয়ে আসবেন।

এছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে বাড়ি, ফ্ল্যাটের তথ্য সংগ্রহ করে নতুন করদাতা খুঁজে বের করতে হবে। হোল্ডিং ট্যাক্স আর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের তথ্য যাচাই করে কয়েক লাখ করদাতা শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে মনে করে এনবিআর। গৃহসম্পত্তি জরিপের ক্ষেত্রে জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড কমিশনার, ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য, ফ্ল্যাট মালিক বা ব্যবসায়ী সমিতিকে অবহিত করা বা তাদের সহায়তা নিতে বলা হয়েছে। জরিপে স্বচ্ছতা আনয়ন, জরিপ টিমকে সহায়তা ও করদাতাদের উদ্বুদ্ধ করতে মাইকিং করতে হবে। এছাড়া স্থানীয় গণমাধ্যম ও কেব্ল টিভিতে জরিপের বিষয়ে প্রচার করতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে কর অঞ্চল-১৩ ঢাকার কমিশনার বজলুল কবির ভূঁইয়া শেয়ার বিজকে বলেন, গতবছর এ কর অঞ্চলের আওতাধীন এলাকায় প্রায় তিন হাজার নতুন করদাতার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর থেকে নতুন করদাতা শনাক্ত করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। বাড়ি-ফ্ল্যাট-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সব জায়গা থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের জরিপ টিমে রাখার উদ্দেশ্য হলো জরিপে স্বচ্ছতা আনা। এতে ওইসব শিক্ষার্থী আর্থিকভাবে কিছুটা হলেও লাভবান হয়েছে। জরিপে কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এবারের জরিপে আরও বেশি শিক্ষার্থীকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হবে।

সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ জরিপের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা থেকে তথ্য সংগ্রহের (সেকেন্ডারি সোর্স) ওপর জোর দিতে বলা হয়। বাড়ি, ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক স্পেসের অনুমোদনের তথ্য পৌরসভা, সিটি করপোরেশনের কাছে রয়েছে। এসব তথ্য করদাতা শনাক্তে সহায়ক হবে। এছাড়া বাড়ি, ফ্ল্যাট ও হাউজিং কোম্পানির তথ্য রিহ্যাবের কাছ থেকে নিতে হবে। প্রয়োজনে রিহ্যাব, হাউজিং সোসাইটি, ফ্ল্যাট মালিকদের সঙ্গে জরিপ টিম মতবিনিময় করে করদাতা শনাক্ত করবে। এছাড়া ডিপিডিসি, ডেসকো, তিতাস, ওয়াসা, কর্ণফুলী, বাখরাবাদসহ সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন, রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি, বিআরটিএ থেকে তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই করে নতুন করদাতা শনাক্ত করতে হবে। জরিপ টিমের পরিচিতির জন্য টিমের সদস্যদের পরিচয়পত্র, টুপি, এপ্রোন ও জ্যাকেট থাকবে। কর কমিশনার প্রত্যেক টিমকে তদারকি ও যেসব নতুন করদাতা পাওয়া যাবে, তাদের আয়কর নথি চালু করবে।

এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য (কর জরিপ ও পরিদর্শন) মো. মেফতাহ উদ্দিন খান শেয়ার বিজকে বলেন, এবার জরিপে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেজন্য কিছুটা নতুনত্ব আনা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ১২ লাখ। সঠিকভাবে জরিপ হলে লক্ষ্যের চেয়ে অনেক বেশি করদাতা শনাক্ত করা সম্ভব হবে।