Print Date & Time : 8 August 2025 Friday 8:20 pm

গ্রাহক চাহিদা ৩৯ শতাংশ পূরণে সক্ষম কেজিডিসিএল

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: আবাসন ও শিল্প-কলকারখানায় প্রতিনিয়তই বেড়ে চলছে চট্টগ্রামে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ শিল্প-কারখানায় বাড়ছে গ্যাসের চাহিদা। এ অঞ্চলে গড়ে প্রতি মাসে গ্রাহকের চাহিদা রয়েছে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের। যার মাত্র ১৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে পারে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি কেজিডিসিএল। যা গ্রাহক চাহিদার ৩৯ শতাংশ মাত্র। অথচ প্রতি মাসে কমছে এ সক্ষমতা। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে কমেছে প্রায় ৩৮ মিলিয়ন ঘনফুট। এ সক্ষমতা নাগরিকের বহুমুখী সংকট তৈরি করছে।

কেজিডিসিএল সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতি বছরের আবাসিক, শিল্প-কলকারখানা, বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনে বাড়ছে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা। কিন্তু কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) বিদ্যমান সংযোগ প্রাপ্ত গ্রাহকের প্রতি মাসে চাহিদা আছে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। বিপরীতে কেজিডিসিএল সরবরাহ করতে পারে মাত্র ১৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট। এ গ্যাস বিপণন সক্ষমতাও প্রতি মাসে কমছে।

২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে কোম্পানিটির গ্যাস বিপণন সক্ষমতা ছিল ২১৩ দশমিক  শূন্য ৯ মিলিয়ন ঘনফুট। একইভাবে ফেব্রুয়ারি মাসে ১৮৫ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ঘনফুট, মার্চে ২০৭ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ঘনফুট, এপ্রিলে ২০২ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট, মে মাসে ২০৫ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন ঘনফুট, জুন মাসে ১৮০ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট, জুলাই মাসে ১৯৯ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ঘনফুট, আগস্ট মাসে ১৯৪ দশমিক ২৩ মিলিয়ন ঘনফুট, সেপ্টেম্বর মাসে ২৭৭ দশমিক ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট, অক্টোবর মাসে ১৮৮ দশমিক ২৪ মিলিয়ন ঘনফুট, নভেম্বর মাসে ক্রয় করে ১৭৫ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট এবং ডিসেম্বর মাসে ১৭৮ দশমিক ২১ মিলিয়ন ঘনফুট।

পাশাপাশি এ বিতরণ কোম্পানি বিক্রয়চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২০১৭ সালের জানুয়ারি হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত কেজিডিসিএল বিতরণের জন্য গ্যাস কিনছে ২৩০৭ দশমিক ৭১ মিলিয়ন ঘনফুট। আর বিক্রি করে ২৫৪০ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে সিস্টেম গেইন বা অতিরিক্ত গ্যাস বিক্রয় ছিল ২৩২ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে সংস্থাটির নিট মুনাফা করে ৩৫৭ কোটি ৩২ লাখ ১০ হাজার টাকা। আর গড়ে প্রতি ঘনফুটের দাম ১২ টাকা ৩৮ পয়সা  হিসেবে এ সিস্টেম গেইনের মুনাফা হয় ২৮৮ কোটি ১৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা। যা সংস্থাটির এক বছরের অর্জিত নিট মুনাফার চেয়েও কিছু কম। যা রীতিমতো বিস্ময়কর।

প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় হার বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতি বছর কেজিডিসিএলের অতিরিক্ত গ্যাস বিক্রয় হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত অর্থবছরে (২০১৫-১৬) আট দশমিক ৭০ শতাংশ গ্যাস বাড়তি বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি। যা আগের বছর ছিল পাঁচ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরের অতিরিক্ত গ্যাস বিক্রয়ের হার ছিল সাত দশমিক ৯৭ শতাংশ। ২০১২-১৩ সালে আট দশমিক ৬৭ শতাংশ। ২০১১-১২ সালে ছয় দশমিক ৭৫ এবং ২০১০-১১ সালে তিন দশমিক ৯০ শতাংশ। ধারাবাহিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি গ্যাস ক্রয়ের চেয়ে বেশি বিক্রয় নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)ও। বছর দু’য়েক আগে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য কমিশনে জমার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিক নির্দেশে তৎকালীন কমিশন চেয়ারম্যান এ আর খান এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য কমিশনের কাছে জমা দিতে বলেন। পাশাপাশি কীভাবে বাড়তি গ্যাস বিক্রি সম্ভব হচ্ছে, তার ব্যাখ্যাও।

সংস্থাটির প্রতিবেদন মতে, বর্তমানে কোম্পানির শিল্প, বাণিজ্যিক ও আবাসিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রমপুঞ্জিত গ্রাহক সংযোগ দাঁড়ায় মোট ছয় লাখ দুই হাজার ৭৯টি। আর তাদের গ্যাসের চাহিদার ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের বিপরীতে বর্তমানে সরবরাহ রয়েছে ১৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ ঘাটতি দাঁড়ায় ২৭২ মিলিয়ন ঘনফুট। আর চাহিদা দ্বিগুণ হলে কেজিডিসিএল গ্যাস সরবরাহ তেমন বাড়েনি। উল্টো সক্ষমতা না থাকার পরও পাঁচ বছরের সংযোগ প্রদান করেছে দুই লাখ ৩২ হাজার ৩৭১টি সংযোগ প্রদান করা হয়।

এ অতিরিক্ত সংযোগে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য কখনো বিতরণে রেশনি করা হলেও তারচেয়ে বেশি গ্যাসের প্রেসার কমিয়ে কিংবা কোনো অঞ্চলে কয়েক ঘণ্টা সরবরাহ বন্ধ করে রাখা হয়। ফলে কেজিডিসিএল প্রতি বছর গ্যাস ক্রয়ের চেয়ে বেশি বিক্রয় করছে। এতে গ্রাহকরা ন্যায্য সরবরাহ না পেয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। এক্ষেত্রে আবাসিকের গ্রাহকরা ভোগান্তিতে বেশি পড়ছে। অথচ গ্রাহকরা তাদের নির্ধারিত বিল পরিশোধ করছে। কিন্তু বছরের গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়। যাকে ‘সিস্টেম গেইন’ বলে আয় বাড়িয়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রামের কেজিডিসিএলের একাধিক গ্রাহক শেয়ার বিজকে বলেন, প্রয়োজনে অনেক সময় গ্যাস পায় না। অনেকটা বাধ্য হয়ে বিকল্প উপায়ে রান্নার কাজ করতে হয় কিংবা দোকান থেকে খাবার কিনে আনতে হয়।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ক্রয়ের চেয়ে বিক্রয় বেশি-বিস্ময়কর। এতে মুনাফাও করছে বেশি। আর সরবরাহ সক্ষমতা না থাকার পরও নতুন নতুন সংযোগ দিয়ে গ্যাস সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। আমরা শিল্পপ্রতিষ্ঠানে তো মানসম্মত গ্যাস পাচ্ছি না। এ কারণে তো অনেক মূলধনী যন্ত্রপাতিও নষ্ট হচ্ছে।

জানতে চাইলে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মামুন শেয়ার বিজকে বলেন, চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট আছে এটা ঠিক। আমাদের বিপণন সক্ষমতা বাড়ানো জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। আগামী এপ্রিলে মহেশখালী এলএনজি প্ল্যান্ট স্থাপন কাজ শেষ হলে আশা করি তখন এ সংকট আর থাকবে না।

প্রসঙ্গত, বৃহত্তর চট্টগ্রামে গ্যাস বিতরণের লক্ষ্যে ২০১০ সালে ফেব্রুয়ারিতে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি (কোম্পানি অ্যাক্ট-১৯১৩) হিসেবে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গঠিত হয়। গ্যাস ক্রয়, বিক্রয় ও বিতরণের কার্যক্রম শুরু করে একই বছরের মে মাসে।