গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স: অগ্নি-যানবাহনে আয়ের প্রবৃদ্ধিতে মুনাফা বেড়েছে

পলাশ শরিফ: গত দুবছরে স্থায়ী আমানতের সুদহার অর্ধেকে নেমে গেছে। এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বিমা খাত। মুনাফার প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে প্রায় সব কোম্পানি। এর বাইরে নয় সাধারণ বিমা খাতের শীর্ষ কোম্পানি গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স। অগ্নি ও যানবাহন বিমার প্রিমিয়াম আয়ের প্রবৃদ্ধিই এখন তাদের বড় ভরসা। আর এ আয়ের ওপর ভর করেই সর্বশেষ অর্থবছরে কোম্পানিটির অবলিখন মুনাফা প্রায় সাত কোটি ৯০ লাখ টাকা ও কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় এক কোটি ৮২ লাখ টাকা বেড়েছে।

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, বিমা খাতে প্রতিযোগিতা, ব্যবস্থাপনা ব্যয় বৃদ্ধি, বড় অঙ্কের বিমা দাবি পরিশোধের চাপ ও বিনিয়োগ আয় কমে যাওয়ায় আয়-মুনাফা বাড়াতে প্রিমিয়াম আয়ের ওপর জোর দিয়েছিল কোম্পানিটি। এর জেরে প্রিমিয়াম আয় ও অবলিখন মুনাফা বেড়েছে। সর্বশেষ অর্থবছরে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স গ্রোস প্রিমিয়াম আয় এর আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ও নিট প্রিমিয়াম আয় প্রায় ছয় কোটি ৭৬ লাখ টাকা বেড়েছে। অগ্নি, নৌ, যানবাহন ও বিবিধ এ চার ধরনের বিমার মধ্যে অগ্নি ও যানবাহন বিমার ওপর ভর করে অবলিখন মুনাফা বাড়িয়েছে গ্রীন ডেল্টা। এ সময় কোম্পানিটির অবলিখন মুনাফা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় সাত কোটি ৯০ লাখ টাকা বেড়ে ৩৮ কোটি ৫১ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আর কর-পরবর্তী মুনাফা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় এক কোটি ৮২ লাখ টাকা বেড়ে সর্বশেষ প্রায় ২৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে তিন টাকা আট পয়সা। এক বছরের ব্যবধানে ইপিএস বেড়েছে প্রায় ২৩ পয়সা।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স অগ্নি বিমা থেকে সর্বশেষ অর্থবছরে প্রায় ৩৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা নিট প্রিমিয়াম আয় করেছে। যা কোম্পানিটির মোট নিট প্রিমিয়ামের প্রায় ২৭ শতাংশ। এ খাত থেকে কোম্পানিটির আয় (রেভিনিউ ইনকাম) এর আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ছয় কোটি ৭৯ লাখ টাকা বেড়ে সর্বশেষ প্রায় ১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা দাঁড়িয়েছে। একইভাবে যানবাহন বিমা থেকেও কোম্পানিটির আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে। এ সময় এ খাত থেকে প্রায় ১৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা নিট প্রিমিয়াম আয় করেছে গ্রীন ডেল্টা। যা কোম্পানিটির মোট নিট প্রিমিয়ামের প্রায় ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর অর্থবছর শেষে এ খাত থেকে কোম্পানিটির আয় দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৩০ লাখ টাকা। চারটি খাতের মধ্যে এ তিনটি খাত থেকেই আয় বেড়েছে। আর নৌ বিমা থেকে নিট প্রিমিয়াম বাড়লেও এ খাত থেকে আয় আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় দুই কোটি ৪২ লাখ টাকা কমেছে। সে হিসেবে নৌ ও যানবাহন বিমা কোম্পানিটির মুনাফা বৃদ্ধিতে ‘নিয়ামক’ হিসেবে কাজ করেছে।

গ্রীন ডেল্টার কোম্পানি সচিব সৈয়দ মইনউদ্দিন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ব্যাংকের স্থায়ী আমানতের সুদহার কমা, বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় বিমা দাবি পরিশোধ এবং চলমান অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে সর্বশেষ অর্থবছর চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গেছে। এ বছর বিনিয়োগ আয়ও কমেছে। তারপরও নৌ ও যানবাহন বিমা থেকে আয় বৃদ্ধির কারণে মুনাফার ধারা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। সম্পদের সর্বোত্তম সুরক্ষা বিবেচনায় গ্রাহকরা গ্রীন ডেল্টাকে বেছে নিচ্ছেন। যে কারণে প্রিমিয়াম আয়-মুনাফা বাড়ছে। আর যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টিকে থাকার সক্ষমতার কারণেই এ সেক্টরে শীর্ষ অবস্থানে আসতে পেরেছি। এ অবস্থান ধরে রাখতে নিত্যনতুন পণ্য ও সেবার দিকে জোর দিচ্ছি।’

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, পুঁজিবাজারে নিম্নমুখী ধারা ও ব্যাংকিং খাতে মুনাফা-সুদহারের রদবদলের কারণে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের বিনিয়োগ আয় কমেছে। বিনিয়োগ আয়ের চারটি খাতের মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ, ব্রোকারেজ কমিশন এবং মুনাফা ও অন্যান্য এ তিনটি খাতেই আয় কমেছে কোম্পানিটির। এর জেরে বিনিয়োগ আয় আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় এক কোটি ৩২ লাখ টাকা কমে সর্বশেষ ৩৬ কোটি ২৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে বিমা বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা ও তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর পণ্যসেবা চালুর কারণে গ্রীন ডেল্টার ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়েছে। সর্বশেষ অর্থবছরে এ খাতে মোট ৩৯ কোটি টাকা ব্যয় করেছে কোম্পানিটি। যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাত কোটি ৮৪ লাখ টাকা বেশি। ওই অর্থবছরে (২০১৪-১৫) এ খাতে প্রায় ৩১ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয় করেছিল কোম্পানিটি।

উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে তালিকাভুক্ত গ্রীন ডেল্টার বর্তমান রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। সর্বশেষ অর্থবছরে প্রায় ২৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা মুনাফার বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। ডিএসইতে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকা ওই কোম্পানির মোট প্রায় আট কোটি ছয় লাখ শেয়ারের প্রায় অর্ধেক উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীর হাতে আট দশমিক ২৫ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে ২৯ দশমিক ৪২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সপ্তাহের সর্বশেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ডিএসইতে ৬৩ টাকা ৪০ পয়সা দরে লেনদেন হয়।