গড়ে উঠুক বিভাগীয় শহরটি

ময়মনসিংহ বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর সে অনুযায়ী এর প্রশাসনিক ভবনাদিসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলায় যে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি, তা স্পষ্ট হয় শেয়ার বিজে প্রকাশিত গতকালের একটি প্রতিবেদনে। কোন কোন জেলা নিয়ে বিভাগটি গঠিত হবে, সে বিষয়ে সৃষ্ট জটিলতা অবসানের পর বিভাগীয় শহর হিসেবে ময়মনসিংহকে গড়ে তোলার কাজে অগ্রগতি নাকি হচ্ছে না জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায়। যে কোনো অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি অধিগ্রহণ একটি বড় পূর্বশর্ত বা সমস্যা। জনবহুল এদেশে জমির অভাব প্রকট। সরকারি কাজের জন্যও জমিজমা ছাড়তে না চাওয়ার প্রবণতা রয়েছে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে। তবে এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত জমি-সংশ্লিষ্ট জনসাধারণ পর্যায় থেকে বড় কোনো বাধা উপস্থিত হওয়ার খবর মেলেনি। এ বিষয়ে একাধিকবার তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার খবর শুধু রয়েছে জেলা ও বিভাগীয় কর্মকর্তাদের। সমঝোতার ভিত্তিতেই এ কাজে এগোতে হবে, সন্দেহ নেই। জমি অধিগ্রহণ বিষয়ে সরকারের হাতে নীতিমালাও রয়েছে। কিন্তু দেশের ‘আটতম যানজটমুক্ত সবুজ নগরী’ হিসেবে ময়মনসিংহকে গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নে সরকারের আর্থিক প্রস্তুতি সম্পন্ন বলে মনে হয় না। আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পাওয়ায় আটকে আছে জমি অধিগ্রহণসহ সব কাজ। ব্রহ্মপুত্র নদের অপর প্রান্তে নতুন বিভাগীয় শহর প্রতিষ্ঠায় গত বছরের জুলাইয়ে ছয় হাজার তিনশ কোটি টাকা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয় বলে জানা গেল। এও জানা গেল, জনপ্রশাসনমন্ত্রীর এ চিঠির কোনো জবাব এখনও মেলেনি মন্ত্রণালয় থেকে। আন্তঃমন্ত্রণালয় যোগাযোগে কোনো সমস্যা উপস্থিত হলে প্রধানমন্ত্রীর দফতর রয়েছে তা নিরসনের জন্য। আমরা আশা করব, এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশের পরও এদিকে তাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হতে পারে। ময়মনসিংহ বিভাগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত যখন গৃহীত হয়েছেই, তখন এজন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজে দেরিতে হলেও হাত দিতে হবে। দরকারি অফিস-আদালত প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় জেলা প্রশাসনের অবকাঠামো তথা অস্থায়ী কার্যালয়েই বিভাগীয় অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে এখন। তাতে অসুবিধা হচ্ছে নিশ্চয়ই। এর মধ্যে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড গঠিত হলেও এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়নি বলে জানা যাচ্ছে। অথচ ইতোমধ্যে চলে গেছে দুটি বছর। ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণায় ওই অঞ্চলের মানুষসহ যারা খুশি হয়েছিলেন এসব খবর তাদের মন খারাপের কারণ হবে বৈকি। নদীর ওপাড়ে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আটটি মৌজায় চার হাজার একরেরও বেশি জমিতে একটি পরিকল্পিত বিভাগীয় শহর গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে নীতিগত পর্যায়ে কোনো মতপার্থক্য রয়েছে বলে জানা যায় না। এ অবস্থায় অর্থ বরাদ্দসহ জমি অধিগ্রহণের কাজে দ্রুত অগ্রগতিই কাম্য। নতুন এ শহরটি হয়ে উঠুক ওই অঞ্চলের উন্নয়নে নেতৃত্বদানকারী প্রশাসনিক কেন্দ্র।