দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমদানি-রপ্তানির ভূমিকা অনস্বীকার্য। সাধারণভাবে চলতি হিসাবের মাধ্যমে দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝানো হয়। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত। সাধারণত চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি কমাতে নানা পদক্ষেপ নিলেও নতুন অর্থবছরের প্রথম মাসেও বাণিজ্য ঘাটতিতে ছিল দেশ। চলতি বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯৮ কোটি ডলার বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। দেশে যে তুলনায় আমদানি হচ্ছে, সে পরিমাণ বাড়ছে না রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স। তাই রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় এ বাণিজ্য ঘাটতি। রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি ভারসাম্যের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়া মানে আমাদের রপ্তানি প্রত্যাশিত মানে বাড়ছে না। তৈরি পোশাক ও রেমিট্যান্সের মতো বড় খাতগুলোয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় সার্বিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাইয়ে দেশে ২০৯ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি।
আমরা মনে করি, রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ, বাজার সম্প্রসারণ এবং আমদানিনির্ভরতা কমানো গেলে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব। কোন কোন খাতে আমদানি বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। মূলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বৃদ্ধির কারণে সার্বিক আমদানি বাড়তে পারে। এটি ইতিবাচক। দেখতে হবে প্রকৃতপক্ষে এ খাতে আমদানি বাড়ছে কি না, কতটা বাড়ছে। অনেক সময় দেখা যায়, ওভার ইনভয়েসিং করে বা বেশি দাম দেখিয়ে অর্থ পাচার হয়। তাই আমদানি ব্যয়ের আড়ালে অর্থ পাচার হওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বর্তমানে কয়েকটি বড় অবকাঠামোগত মেগা প্রকল্পের জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হয়। এ কারণেও বাণিজ্য ঘাটতি বেশি হতে পারে। কিন্তু সেটির পরিমাণও জানা জরুরি।
যেসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি বেশি, তা কমিয়ে আনতে হবে। বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি বেশি। এটি কমাতে বিদ্যমান ৪৬টি পণ্য নয়, দেশটিতে অন্তত ১০০টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ভারত সফররত প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে তার ভারতীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করলে সুফল মিলবে বলেই ধারণা।
বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি ঘটিয়ে সেগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অংশীদার করার প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে। দেশগুলোর ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিজনেস টু বিজনেস (বি টু বি) সফর বিনিময় এবং আলোচনার মাধ্যমে এ সুবিধা কাজে লাগানো যেতে পারে। বাণিজ্য ক্ষেত্রে দূরত্ব বা জটিলতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।
উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ডুয়িং বিজনেসসহ বিভিন্ন জরিপ ও প্রতিবেদনে দেশ যাতে এগিয়ে থাকে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ লক্ষ্যে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও নিরাপত্তা প্রশ্নে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। বিদেশিরা সাধারণত এসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কোনো দেশে বিনিয়োগে সিদ্ধান্ত নেয়। বিদেশি বিনিয়োগ বাণিজ্য ঘাটতি রোধে ভূমিকা রাখবে। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সব প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেই প্রত্যাশা।