Print Date & Time : 2 September 2025 Tuesday 5:35 pm

ঘোষণা দিয়েও লভ্যাংশ বিতরণে প্রতারণা!

আতাউর রহমান: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৯ কোম্পানি ২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরে লভ্যাংশ ঘোষণা করেও বিতরণ না করে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এর মধ্যে আটটি বাজারের মূল মার্কেটে এবং পাঁচটি স্বল্প মূলধনি মার্কেটে (এসএমই প্ল্যাটফর্মে) তালিকাভুক্ত কোম্পানি। লভ্যাংশ ঘোষণা করেও না দিয়ে প্রতারণা করা মূল মার্কেটের কোম্পানিগুলো হচ্ছেÑফরচুন সুজ, তৌফিকা ফুডস (লাভেলো আইসক্রিম), অ্যাডভেন্ট ফার্মা, লুব-রেফ, সাফকো স্পিনিং, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন, প্যাসিফিক ডেনিম এবং এসএস স্টিল। এসএমই প্ল্যাটফর্মের কোম্পানিগুলো হলো অরিজা এগ্রো, বিডি পেইন্টস, মামুন এগ্রো, কৃষিবিদ সিড ও কৃষিবিদ ফিড।

তথ্যমতে, তালিকাভুক্ত ফরচুন সুজ গত বছর ৩০ অক্টোবর বিনিয়োগকারীদের জন্য ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ নগদ এবং পাঁচ শতাংশ বোনাস। লাভেলো আইসক্রিম ২৪ অক্টোবর নগদ ১২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। ৩০ অক্টোবর অ্যাডভেন্ট ফার্মা দুই শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। লুব-রেফ ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ৩১ অক্টোবর, সাফকো স্পিনিং ৩০ অক্টোবর দুই শতাংশ নগদ ও এক শতাংশ বোনাস, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন ৮ নভেম্বর ১০ শতাংশ নগদ, প্যাসিফিক ডেনিম ৩০ অক্টোবর এক শতাংশ নগদ এবং এসএস স্টিল চলতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি দুই শতাংশ নগদ ও আট শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল।

এছাড়া এসএমই প্ল্যাটফর্মের অরিজা অ্যাগ্রো গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর ১১ শতাংশ নগদ, বিডি পেইন্টস ৩১ অক্টোবর ১০ শতাংশ নগদ, মামুন অ্যাগ্রো ২৩ অক্টোবর ১০ শতাংশ নগদ, কৃষিবিদ সিড ১৩ নভেম্বর ১৫ শতাংশ নগদ এবং কৃষিবিদ ফিড চলতি বছর ২৫ জানুয়ারি ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে।

এসব কোম্পানির রেকর্ড ডেট এবং এজিএম নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এরপর সাত-আট মাস পেরিয়ে গেলেও কোম্পানিগুলো ঘোষণাকৃত লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের মাঝে বিতরণ করেনি। ফলে মূল মার্কেটের আট কোম্পানিকে ‘এ’ ও ‘বি’ ক্যাটেগরি থেকে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে স্থানান্তর করা হয়।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, শুধু ক্যাটেগরি পরিবর্তন করলে কোম্পানিগুলো এটিকে গুরুত্ব দেবে না। এ ধরনের প্রতারণা তালিকাভুক্তির আইন লঙ্ঘন। তাই জরিমানাসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দিতে হবে কোম্পানিগুলো। এ ধরনের প্রতারণা শুধু লভ্যাংশ বিতরণেই সীমাবদ্ধ নয়, কোম্পানির শেয়ার নিয়েও কারসাজি হয়, যাতে অনেক কোম্পানির যোগসাজশ থাকে বলে তাদের অভিযোগ।

তালিকাভুক্ত আইনে লভ্যাংশ বিতরণের বিষয়ে বলা হয়েছে, মূল মার্কেটে  তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা বা অনুমোদনের পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিতরণ শেষ করতে হবে। আর এসএমই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে লভ্যাংশ ঘোষণা বা অনুমোদনের পরবর্তী ২২ কার্যদিবসের মধ্যে বিতরণ শেষ করতে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কোম্পানি আইন পরিপালনে ব্যর্থ হলে এক্সচেঞ্জ এই ধরনের লঙ্ঘনের সত্যতা আগে নিশ্চিত করবে। পরে এ বিষয়ে সত্যতা এবং কোম্পানির নাম নোটিশের বা অনলাইন সংবাদের মাধ্যমে এক্সচেঞ্জ সবাইকে জানিয়ে দেবে।

কয়েকজন বিনিয়োগকারী জানান, তালিকাভুক্ত হওয়ার সময় বেশিরভাগ কোম্পানি আর্থিক প্রতিবেদন অতিমূল্যায়িত দেখায়। পরে কোম্পানিগুলোর ব্যবসার অবস্থা খারাপ হতে দেখা যায়, সেটিই কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা। এসব কোম্পানিই ব্যবসা কম হলেও রিজার্ভ থেকে নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়ে ভালো ক্যাটেগরিতে থাকে, যা কয়েক বছর যাওয়ার পর সেটাও আর পারে না। বেশিরভাগ কোম্পানি শেয়ারের দর ভালো অবস্থানে রাখতে এই কাজ করে। আবার অনেক কোম্পানির লোকজনই শেয়ার কারসাজির সঙ্গে যুক্ত  এবং শেয়ারদর বাড়াতে নামমাত্র লভ্যাংশ ঘোষণা করে। ফলে কয়েক বছর ধরে এক শতাংশও লভ্যাংশ দিতে দেখা গেছে।

কঠোর শাস্তির মাধ্যমে এ ধরনের প্রতারণা বন্ধের দাবি তুলে তারা বলেন, যেসব কোম্পানি বর্তমানে লভ্যাংশ দিতে হিমশিম খায় এবং ঘোষণা করেও না দিয়ে প্রতারণা করে, সেসব কোম্পানির বিশেষ নিরীক্ষা করা উচিত। তালিকাভুক্তির সময় থেকে এ পর্যন্ত নিরীক্ষা করলে কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে। পরে কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে এসে কঠিন শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে শুধু লভ্যাংশ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতারণা নয়, তালিকাভুক্তির সময় যে আর্থিক অবস্থা অতিমূল্যায়িত করে প্রতারণা করে, সেটাও বন্ধ হয়।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, যেসব কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করেও বিতরণ করেনি, সেগুলো সরাসরি আইন লঙ্ঘন করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে কোম্পানিগুলো ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে দেয়ার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করা হয়েছে যে, এসব কোম্পানির অবস্থা ভালো নয় এবং এগুলোর শেয়ার কেনা বিপজ্জনক। এছাড়া এসব কোম্পানি নিয়ে এনফোর্সমেন্ট বিভাগের কার্যক্রম চলমান থাকবে। কোম্পানিগুলোর আইন লঙ্ঘনে শাস্তির আগে সব প্রক্রিয়া শেষ করে এনফোর্সমেন্ট বিভাগ থেকে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে এবং কী শাস্তি দেয়া যায়, সে বিষয়ে সুপারিশ করা হবে। পরে সব দিক বিবেচনা করে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।