চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মহেশখালীর তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের টার্মিনালে এলএনজিবাহী কোনো কার্গো তিন দিন ধরে ভিড়তে পারছে না। এতে এলএনজি সরবরাহ কার্যক্রম তীব্রভাবে ব্যাহত হওয়ায় চট্টগ্রামে শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এতে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করায় ব্যয় বেড়েছে তিনগুণ। পাশাপাশি বাণিজ্যিক ও আবাসিক ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা।

কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মহেশখালীর তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের টার্মিনালে এলএনজিবাহী কোনো কার্গো তিন দিন ধরে ভিড়তে পারছে না। এ কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহে নিয়োজিত কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি এবং ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (টিজিটিডিসিএল) সরবরাহ এলাকায় গ্যাসের চাপ কমে গেছে। এ পরিস্থিতির কারণে দুই বিতরণ অঞ্চলে গ্যাসের সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। তবে বুধবার কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মহেশখালীতে অবস্থিত এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট) গত ১৭ জুন থেকে এখন পর্যন্ত (গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত) কোনো এলএনজিবাহী কার্গো ভিড়তে (বার্থিং) করতে না পারায় জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম এলাকার গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহে স্বল্প চাপ বিরাজ করছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কার্গো থেকে এলএনজি সরবরাহ কার্যক্রম আবার শুরু হবে। জনসাধারণের সার্বিক অসুবিধার জন্য পেট্রোবাংলা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।

অপরদিকে গ্যাস সরবরাহ জাতীয় গ্রিডে নিয়মিত কী পরিমাণ এলএনজি সরবরাহ করা হয়, তা দৈনিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করে পেট্রোবাংলা। গত দুই দিন পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটে গ্যাস সরবরাহ-সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। জাতীয় গ্রিডে নিয়মিত কী পরিমাণ এলএনজি সরবরাহ করা হয়, তা দৈনিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করে পেট্রোবাংলা। গত দুই দিন পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটে গ্যাস সরবরাহ-সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। ফলে জাতীয় গ্রিডে কী পরিমাণ এলএনজি সরবরাহ কমেছে, সে বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রামের আবাসিক খাতের গ্রাহক দিলশাদ খানম শেয়ার বিজকে বলেন, গত দুই দিন ধরে গ্যাসের চাপ কম। গতকাল সকালে একদম ছিল না। এ কারণে বাসার লোকজন বাইরে থেকে খাবার কিনে খেয়েছে। আসলে এমন সংকটকালের জন্য কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণকারীর কোম্পানির বা পেট্রোবাংলার বিকল্প রাখা উচিত। গত বছর একই কারণে দুদিন গ্যাস সরবরাহ ছিল না। আগামী দিনও একই সমস্যা হতে পারে। তাই বিকল্প ব্যবস্থার উদ্যোগ নিতে হবে।

অন্যদিকে ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত শেয়ার বিজকে বলেন, গত কয়েক দিনে গ্যাস সংকটে আমাদের কারখানায় ইস্পাত উৎপাদনে ব্যয় তিনগুণ বেড়েছে। আমরা গ্যাস হলে ৩০ টাকা পরিশোধ করি, কিন্তু জ্বালানি তেল ব্যবহার করায় আমাদের ৩০ টাকার গ্যাসের পরিবর্তে ১০০ টাকার তেল ব্যবহার করতে হচ্ছে। অর্থাৎ আমাদের উৎপাদন খরচ তিনগুণ হচ্ছে। এখন বাজারে রডের চাহিদা না থাকায় রডের দামও বাড়ানো যাচ্ছে না, ফলে আমাদের ব্যয় বেড়েছে।

এ বিষয়টি নিয়ে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি অপারেশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আমিনুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘দুর্যোগজনিত কারণে এলএনজি সরবরাহ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য চট্টগ্রামের গ্যাসের চাপ কম। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি কার্গো জাহাজ ভিড়ছে। আশা করছি সন্ধ্যা থেকে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাসে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে কেজিডিএল মাত্র ২২০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করে। অর্থাৎ চাহিদার অর্ধেক গ্যাস সরবরাহ করতে পারে সংস্থাটি।