চট্টগ্রামে জমজমাট ঈদবাজার

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের শপিংমল ও বিপণিবিতানগুলোয় জমজমাট ঈদ বিকিকিনি। ইফতারের পর ছোট-বড় প্রতিটি মার্কেটে বাড়ছে ভিড়। ক্রেতারা ঢুঁ মারছেন পছন্দের ফ্যাশন হাউসে। নামিদামি ব্র্যান্ডের ফ্যাশন হাউসগুলোও বৈচিত্র্য ডিজাইনের মাধ্যমে নতুনত্ব এনে ক্রেতা আকর্ষণের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। প্রসিদ্ধ শপিংমলগুলোয় দেশীয় পোশাকের পাশাপাশি বাহারি ডিজাইনের বিদেশি পোশাক শোভা পাচ্ছে। তবে এবার ডিজাইনাররা গরমকে প্রাধান্য দিয়ে সুতি কাপড়ে গুরুত্ব দিয়েছে। তাতে সাড়াও পেয়েছে বিক্রেতারা।

নগরীর টেরিবাজার, নিউমার্কেট বিপণিবিতান, রেয়াজুদ্দিন বাজার, তামাকুমণ্ডি লেইন, জহুর হকার্স মার্কেট, বালি আর্কেড, কেয়ারি ইলিশিয়াম, সেন্ট্রাল প্লাজা, মিমি সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা, ফিনলে স্কয়ার, শপিং কমপ্লেক্স, স্যানমার ওশ্যান সিটি, ইউনেস্কো সিটি সেন্টার, আমিন সেন্টার, ভিআইপি টাওয়ার, ফিনলে সাউথ সিটি, আখতারুজ্জামান সেন্টার, সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট এবং মতি টাওয়ারের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, প্রায় দোকানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। কারও যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। ক্রেতাদের আকর্ষণে বিরতিহীনভাবে বিভিন্ন ধরনের পোশাক এবং পণ্যের কালেকশন দেখাছেন বিক্রেতারা।

বিক্রেতারা জানান, এবার নতুন নতুন ডিজাইন ও বাহারি দেশীয় কাপড়ে?র পাশাপাশি ভারতীয় ও পাকিস্তানি থ্রিপিস এনেছেন তারা। ভারতীয় ও পাকিস্তানি থ্রিপিসের মধ্যে হিরামন ডি, আলিয়াকার্ট, বিন হামিন, তাওয়াক্কাল, নোরা, ইন্দু ওয়েস্টার্ন, নায়রা, গারারা ও সারারা ইত্যাদি নামের পোশাক দেখা গেছে। নগরীর মিমি সুপার মার্কেটের এক ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারী জানান, ঈদে ভারতীয় ও পাকিস্তানি থ্রিপিসের চাহিদা থাকে বেশি। এ জন্য শোরুমে এই দুই দেশের পোশাক রেখেছি বেশি। তিনি বলেন, পাকিস্তানি থ্রিপিস সাড়ে ৩ থেকে ৯ হাজার টাকা, ভারতীয় ৪ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে পাঞ্জাবির শোরুমগুলোয় তরুণদের প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিভিন্ন শোরুমে ছাড়মূল্যে পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে। তাই বিশেষ করে তরুণরা এসব শোরুমে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। মিমির পাশেই আফমি প্লাজার অঞ্জন, সৃষ্টি, বাংলার মেলা, দেশাল, রঙ, সাদা কালো, ক্যাস্টস আই এবং শৈল্পিক ইত্যাদি শোরুমে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়। পাশাপাশি আড়ং, জেন্টাল পার্ক, ইয়োলো, সেইলরের মতো একক বড় বড় ফ্যাশন হাউসগুলোয় উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। এসব শোরুমের বিক্রেতারা জানান, ইতোমধ্যে জমতে শুরু করেছে ঈদবাজার। বরাবরের মতোই তরুণদের প্রথম পছন্দের শীর্ষে রয়েছে পাঞ্জাবি। তাই বিভিন্ন কালার ও ডিজাইনের প্রচুর পাঞ্জাবি রাখা হয়েছে।

এদিকে দেশি-বিদেশি থান কাপড়ের জন্য বিখ্যাত শত বছরের পুরোনো টেরিবাজার। এখানে ছোট-বড় প্রায় আড়াই হাজার কাপড়ের দোকান রয়েছে। শপিংমল রয়েছে অন্তত ৮০টি। চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের দেশি কাপড় পাওয়া যায়; তাই পাইকারি ক্রেতারা যুগ যুগ ধরে ছুটে আসেন এখানে। ঈদের এক মাস আগ থেকে শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিস, শার্টপিস, প্যান্ট পিসসহ গজ কাপড় কিনতে আসেন দেশের নানা প্রান্তের খুচরা বিক্রেতারা। ঈদকে ঘিরে কুমিল্লা, নোয়াখালী, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের খুচরা ব্যবসায়ীদের ভিড় জমান। এবার ঈদে বিক্রির জন্য ভারত, পাকিস্তান, চীন, থাইল্যান্ড থেকেও ব্যবসায়ীরা কাপড় এনেছেন।

টেরিবাজারের চিটাগাং শাড়ি হাউসের বিক্রয় কর্মী নুরুল আফছার বলেন, ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের চাহিদার দিকটা মাথায় রেখে এবার টাঙ্গাইল, জামদানি, সুতি ও ডিজিটাল প্রিন্টের পাশাপাশি বিদেশ থেকে কাতান, লিনেন, নেট, জর্জেট, শিপনসহ হরেক রকম কাপড় আমদানি করা হয়েছে। টেরিবাজারে রমজানের আগে ব্যবসা জমে ওঠে। এখান থেকে পাইকারি কাপড় নিয়ে খুচরায় বিক্রেতারা বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বিক্রয় করে ব্যবসায়ীরা। রমজানের শুরুতে পাইকারি ক্রেতাদের ভিড় ছিল। এখন খুচরা ক্রেতারা ভিড় করছে। চকবাজার থেকে চিটাগং শাড়ি হাউসে আসা গৃহিণী জিন্নাত জাহান বলেন, পরিবারের প্রায় সবার জন্যই এখান থেকে শপিং করেছি। তবে গত বছরের দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। দামের বিষয়ে বিক্রেতা আফছার জানান, পোশাকের আমদানি খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে আমরা ক্রেতাদের কাছে ন্যূনতম লাভে পণ্য বিক্রি করে থাকি।

টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, আমাদের মার্কেটে জমজমাট বেচাবিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের মার্কেটে সব ধরনের মানুষের উপযোগী পণ্য রয়েছে। জিইসি মোড়ের সেন্ট্রাল প্লাজায় বান্ধবীর সঙ্গে কসমেটিকস কিনতে আসা জয়া ইকরাম বলেন, দু’দিন আগে ফিনলে থেকেই নিজের জন্য গাউন এবং আম্মুর জন্য সালোয়ার-কামিজ নিয়েছিলাম। আজ জামার সঙ্গে মিলিয়ে সেন্ট্রাল প্লাজা থেকে কসমেটিকস নেব; তারপর সানমারের বাটা অথবা অ্যাপেক্স থেকে জুতা নিয়ে বাসায় চলে যাব।