সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম জেলায় বছরে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবসা এক হাজার কোটি টাকার বেশি। আর ড্রিংকিং ওয়াটার উৎপাদন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে ৮০টি কোম্পানি। এর মধ্যে ৫২টি প্রতিষ্ঠানের নেই বিএসটিআই’র মান সনদ কিংবা অনুমোদন। অর্থাৎ অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশুদ্ধ পানির বাজারে অংশীদারিত্ব ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতারণা করে বছরে তুলে নিচ্ছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। যদিও এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেই কার্যকর পদক্ষেপ।
বিএসটিআই’র চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলার ৮০টি ড্রিংকিং ওয়াটারের মধ্যে বিএসটিআই মানসনদ দিয়েছে মাত্র ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে। সে হিসাবে ৫২টি প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে পানির ব্যবসায় জড়িত আছে। অবৈধ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে এনআর ড্রিংকিং ওয়াটার, জান্নাত ইন্টারন্যাশনাল, স্মার্ট ড্রিংকিং ওয়াটার, এজেট এন্টারপ্রাইজ, আবদুল্লাহ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, অহি ইন্টারন্যাশনাল, সাজ এন্টারপ্রাইজ, এএমএস ইন্টারন্যাশনাল, রিলাই ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, এফআর ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ, অজিফা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, কেজিএন করপোরেশন, শাহী ওয়াটার টেকনোলজি, ম্যানিতা পিওর ড্রিংকিং ওয়াটার, আলফা ড্রিংকিং অ্যান্ড বেভারেজ, এমএ সায়েন্টিফিক, ডি আলম অ্যান্ড ব্রাদার্স, জেএসএস ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ওয়াটার, সলিউশন ২৪, এসএম চৌধুরী ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, রজিয়া ড্রিংকিং অ্যান্ড বেভারেজ, ক্লিয়ার ড্রিংকিং ওয়াটার, আরএস করপোরেশন, আল মদিনা সুপার ড্রিংকিং ওয়াটার, জেবি এন্টারপ্রাইজ, এসকে এন্টারপ্রাইজ, রাভিনো লিমিটেড, ইকো ড্রিংকিং ওয়াটার, আলিফ এন্টারপ্রাইজ, এমএ ট্রেডার্স, ওরিয়েন্ট রিফাইন ওয়াটার কোম্পানি, স্মাইল ড্রিংকিং ওয়াটার, তানহা এন্টারপ্রাইজ, আল ওয়াফা ড্রিংকিং ওয়াটার, আসিফ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, আরিবাহ ড্রিংকস অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, রহমাস এন্টারপ্রাইজ, নুর ড্রিংকিং ওয়াটার, এইচকে ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, প্যাসিফাই বেভারেজ, হুদাফাই ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, আল রিয়াদ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, ডিসকভারি ড্রিংকিং ওয়াটার, খাজা ফুড বেভারেজ, ম্যাটস ড্রিংকিং ওয়াটার, অক্সিজেন ড্রিংকিং ওয়াটার, আন্তরিক বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ, টেকনো বিডি, চট্টলা ড্রিংকিং ওয়াটার, এসডি ড্রিংকিং ওয়াটার এবং একুয়া ফ্রেশ মিনারেল ওয়াটার।
অভিযোগ আছে, মানসনদহীন একাধিক প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের পরিশোধন ব্যবস্থা ছাড়াই অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে কলের পানিকে মিনারেল ওয়াটার বলে বাজারজাত করছে। এতে একদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকি যেমন বাড়ছে, অন্যদিকে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামে বিএসটিআই অনুমোদিত ব্র্যান্ডগুলো হলোÑইয়েস, সিনমিন, মুসকান, দাদা, আনন্দ, কনফিডেন্স, আরওয়াহ, ডানকান, ড্রিম, মিম সুপার, আরিবা, ডক্টর ওয়াটার, এশিয়া এগ্রো, ভাইটাল, কিনো প্রভৃতি। অপরদিকে ভেজাল ব্যবসায়ীদের এমন দৌরাত্ম্যের কারণে চার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও লাভের মুখ দেখছে না চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিশুদ্ধ পানি উৎপাদনকারী কারখানা প্রিমিয়ার মিনারেল ড্রিংকিং ওয়াটার।
মিনারেল ওয়াটার উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যবসায়ী জানান, চট্টগ্রামে প্রতিদিন বোতলজাত পানি বিক্রি হচ্ছে ১০ লাখ লিটার, আর বছরে ৩৬ কোটি লিটার। প্রতি ২০ লিটারের জার গড়ে ৩০ টাকা হলে বছরে ব্যবসা হয় এক হাজার ৮০ কোটি টাকা। আর ৪৫ হাজার গ্রাহক এ পানির ক্রেতা। বিএসটিআই’র হিসাবে ৮০টির অধিক ড্রিংকিং ওয়াটার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে ৫২টি প্রতিষ্ঠানের নেই বিএসটিআই’র অনুমোদন। অথচ এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো বিশুদ্ধ পানির বাজারে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে।
তারা বলেন, বেশি দামে এ পানি কিনলেও ক্রেতারা অধিকাংশই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এতে মিনারেল ওয়াটার পানকারী মানুষের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এক্ষেত্রে অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো মিনারেল ওয়াটার উৎপাদন ও বাজারজাত করার আগে বিএসটিআই’র অত্যাবশ্যকীয় শর্ত পালন করে বৈধভাবে ব্যবসা করলে জনজীবনের ঝুঁকি কমবে। পাশাপাশি আমাদের লোকসানও কমবে ও সুষম প্রতিযোগিতা নিশ্চিত হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ড্রিংকিং ওয়াটার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আদনানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক এক দায়িত্বশীল নেতা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সংগঠনের তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কারখানার লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। সংগঠনের সদস্যদের এ ব্যাপারে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও কাজ হচ্ছে না। আবার অনেকে লাইসেন্স গ্রহণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দীর্ঘসূত্রতার কারণেও আগ্রহী হচ্ছেন।’ তবে লাইসেন্স না থাকলেও নগরীতে মানসম্পন্ন অনেক কারখানা তালিকায় আছে। হয়তো মানসনদ নিতে দেরি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিএসটিআই চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক নুরুল আমীন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের হিসাবে চট্টগ্রামের মোট ৮০টি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে মিনারেল ওয়াটার উৎপাদন করে। এর মধ্যে মাত্র ২৮টি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন আছে। বাকি ৫২টি প্রতিষ্ঠান অনুমোদনবিহীনভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমরা বিভিন্ন সময়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। এ পর্যন্ত ৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছি। পাশাপাশি স্থানীয় গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তিও প্রচার করেছি। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, দণ্ডপ্রাপ্তির পর অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো নাম ও স্থান পাল্টিয়ে আবারও তাদের ব্যবসা শুরু করে। এ ধরনের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে আমরা একাধিকবার জরিমানা করি। তবে শুধু জরিমানা করলেই হবে না, এ ব্যাপারে জনগণকেও সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম।’

Print Date & Time : 29 July 2025 Tuesday 11:57 pm
চট্টগ্রামে পানির অবৈধ ব্যবসা বছরে ৭০০ কোটি টাকা
পত্রিকা ♦ প্রকাশ: