চট্টগ্রামে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোগ নিন

একসময় চট্টগ্রাম ছিল বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় স্থান। অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারীও এখানে বড় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সে চিত্রে ভাটা পড়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রামে বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন অত্যন্ত নগণ্য পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমনকি বিনেয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে সরকার সহায়ক নীতি প্রণয়ন করলেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হচ্ছে না। তবুও চট্টগ্রাম বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সর্বাপেক্ষা সম্ভাবনাময় অঞ্চল।

শতভাগ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (ডিএফআই), রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড), অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইজেড) যৌথ বিনিয়োগ অথবা এ এলাকার বাইরের বিনিয়োগ, নিজস্ব ইপিজেড তৈরি প্রভৃতি ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতে দ্রুত সেবা প্রাপ্তিসহ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন ছাড় দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বিদেশিদের আস্থা অর্জনে আমরা কতটা সফল, সেটি নতুন করে ভাবতে হবে।

গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘চট্টগ্রামের বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন: তিন অর্থবছরে মাত্র ৬৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ নিবন্ধন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে প্রকৃত চিত্র। এতে বলা হয়, প্রতিবেদনে বলা হয়, চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছিল ১১ কোটি ৬৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১৪ কোটি তিন লাখ টাকা, আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৩৭ কোটি ৮৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অর্থাৎ তিন অর্থবছরে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধন হয়েছে মাত্র ৬৩ কোটি ৫৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার। এভাবে প্রতি বছর কমছে বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন।

ভৌগোলিক অবস্থান, বন্দর, জমি ও অবকাঠামোগত সুযোগ থাকায় চট্টগ্রাম ছিল বিনিয়োগে বিদেশিদের প্রথম পছন্দ। গত তিন বছরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাত্র ৬৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয়, চট্টগ্রাম অঞ্চল বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হারিয়েছে। এটি তো স্বীকৃত যে, বিদেশি বিনিয়োগে আমাদের মতো সুবিধা খুব কম দেশই দিয়েছে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সম্পদ-প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে এর বড় ভূমিকা রয়েছে। সেখানে চট্টগ্রামের মতো বিনিয়োগ-সহায়ক অঞ্চলে বিনিয়োগ কমে যাওয়া নিশ্চয়ই ভালো লক্ষণ নয়। প্রতি বছর বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে জরিপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। হয়তো চটগ্রামে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার বিষয়টিও উঠে আসবে জরিপে। অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময়, উদ্বুদ্ধকরণÑপ্রয়োজনে দূতাবাসের সহায়তা নিয়ে বিনিয়োগ বাড়াতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

বর্তমানে দেশের প্রধানতম বন্দর ও বাণিজ্যিক শহরসংলগ্ন এলাকায় দেশের প্রথম টানেলসহ অনেকগুলো অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা ও সুবিধা বৃদ্ধির কাজ চলছে। সব মিলে দেড় লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান। কিন্তু এত সম্ভাবনার পরও বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন কমে যাওয়া দুঃখজনক। ব্যবসায়ীদের দাবি, শিল্প-বাণিজ্যের জন্য আদর্শ স্থান হলেও জমির স্বল্পতা ও অত্যধিক দাম, গ্যাস-পানির সংকটসহ নানা কারণে শিল্প-বিনিয়োগ কমছে। চট্টগ্রামে বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন কমে যাওয়ার কারণ চিহ্নিত করে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।