সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, ভ্রমণ, শিক্ষাসহ নানা কারণে চট্টগ্রাম থেকে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ যাত্রী যাত্রায়াত করছে প্রতিবেশী দেশ ভারতে। দীর্ঘ ট্রেন যাত্রা ও সড়কপথে ভোগান্তির কারণে এ রুটে আকাশপথে যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। আর এ বর্ধিত যাত্রীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বেসরকারি বিমান কোম্পানিগুলো একে একে চালু করছে চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে বিমান চলাচল। এতে যাত্রী আকর্ষণে কোম্পানিগুলোর মধ্যে চলছে প্রতিযোগিতা।
বেশ কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির বাস ভারতে যাত্রী পরিবহন করে। সোহাগ, গ্রীনলাইন, এস আলম, ইউনিক, শ্যামলী পরিবহন সরাসরি ও বেনাপোল হয়ে কলকাতায় যাত্রী পরিবহন করে। এর মধ্যে শুধু শ্যামলী পরিবহন সরাসরি ভারতে যাত্রী নিয়ে যায়। নানা কারণে এসব পরিবহনের অর্ধেক যাত্রীই কমে গেছে।
গত সপ্তাহে বৃহস্পতি ও শুক্রবার শ্যামলী ও গ্রীনলাইন পরিবহনের চট্টগ্রাম থেকে কোনো বাস কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। তবে ঢাকা থেকে বাস ছাড়লেও যাত্রীচাপ ছিল কম। যাত্রীদের কাছে অগ্রিম টিকিট বিক্রির সুবিধা দেওয়া হলেও কয়েক দিন ধরে ভারতে যেতে আগ্রহী যাত্রীর সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি পরিবহনের কর্মকর্তারা।
এদিকে চিকিৎসা, ভ্রমণ ও ব্যবসায়িক কাজে বিড়ম্বনা এড়াতে অনেকেই এখন আকাশপথে ভ্রমণে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এছাড়া বাংলাদেশ বিমানের পর্যাপ্ত ও প্রতিদিন ফ্লাইট পরিচালনা না করায় বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো আগ্রহী হয়ে উঠছে এ রুটে যাত্রী পরিবহনে। এ মাসে ‘নভোএয়ার’ ও ‘ইউএস-বাংলা’ এয়ার ফ্লাইট চালু করতে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুফিজুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘গত তিন বছর অভ্যন্তরীণ রুটে সাফল্যের সঙ্গে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে এ সংস্থাটি। এর পাশাপাশি গত বছরের ডিসেম্বরের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন রুটে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ভারতের কলকাতা রুটে পরিচালনা করতে যাচ্ছে নভোএয়ার। ১৪ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রাম- কলকাতা-চট্টগ্রাম এ রুটেও বিমান চলাচল শুরু করবে।’
নভোএয়ার সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কলকাতা-চট্টগ্রাম রুটে প্রোমোশনাল রিটার্ন ভাড়া (ট্যাক্সসহ) সবনি¤œ সাড়ে ১১ হাজার এবং সর্বোচ্চ গ্রাহকের চাহিদানুসারে দাম নির্ধারিত হবে। সপ্তাহে প্রতি সোম, বুধ ও শনিবার বেলা ২টা ৩০ মিনিটে মোট ছয়টি ফ্লাইট পরিচালনা করবে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, দ্রুতই চট্টগ্রাম থেকেও কলকাতায় ফ্লাইট শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নানা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্ককে আরও বেগবান করার প্রত্যয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস ১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে যাচ্ছে। এটি হবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের তৃতীয় আন্তর্জাতিক গন্তব্য।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস লিমিটেডের ডিজিএম-মার্কেটিং সাপোর্ট অ্যান্ড পিআর কামরুল ইসলাম জানান, ঢাকা থেকে যাত্রীদের সুবিধা অনুযায়ী সপ্তাহে প্রতিদিন বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে কলকাতার উদ্দেশে ফ্লাইট ছেড়ে যাবে। ঢাকা-কলকাতা রুটে ইকোনমি ক্লাসে ওয়ান ওয়ের জন্য সর্বনি¤œ ভাড়া পাঁচ হাজার ৯৯৯ টাকা। রিটার্নসহ ৯ হাজার ৯৯৯ টাকা। ভাড়ায় সব ধরনের ট্যাক্স ও সারচার্জ অন্তর্ভুক্ত। পাশের দেশ ভারতের অন্যতম গন্তব্য কলকাতায় ঢাকা থেকে ১৫৮ আসনের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এয়ারক্রাফট দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করতে যাচ্ছে।
গত বছর বোয়িং ৭৩৭ দিয়ে কলকাতায় যাত্রী আনা-নেওয়া শুরু করে ‘রিজেন্ট’। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন বোয়িং এয়ারক্র্যাফট দিয়ে ফ্লাইট চালানো করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি। বোয়িং-৭৩৭ প্রতিদিন ঢাকা-কলকাতা ও চট্টগ্রাম কলকাতা উভয় রুটে যাত্রী আনা-নেওয়া করছে। বাকি চার দিন চলছে ড্যাশ-এর ‘টার্বোপ্রপ এয়ারক্র্যাফট’। বোয়িং-৭৩৭ এখন প্রতিদিন প্রথমে ঢাকা থেকে কলকাতা যায়। সেখান থেকে যাত্রী নিয়ে ফিরবে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম থেকে যাত্রী নিয়ে ফের কলকাতা পৌঁছে আবার কলকাতা থেকে ঢাকা আসবে। সপ্তাহের শনি, সোম ও বুধবার বোয়িং-৭৩৭-এর এয়ারক্র্যাফট চলবে। রোববার, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শুক্রবার চলবে ড্যাশ-এর টার্বো প্রপ।
রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, বোয়িংয়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ফ্লাইট অপারেশন শিডিউলে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। আর এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা যাবে সর্বোচ্চ নির্বিঘœ যাত্রীসেবাও।