সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশে চলমান ডলার সংকট ও আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা কারণে দেশের আমদানির পরিমাণ কমেছে। এতে প্রত্যাশিত ভাড়া ও ট্রিপ না পাওয়ায় অলস গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানিবাহী পণ্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পণ্য পরিবহন ভাড়া নিচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। অপরদিকে ঢাকা অঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী রপ্তানি পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা কম আছে। কিন্তু চাহিদা বেশি থাকায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী পণ্য পরিবহনে ভাড়া নিচ্ছে ২৫ হাজার টাকা। মূলত আমদানি হ্রাস ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্যবাহী ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যানে পণ্য পরিবহনে ব্যয়ে এমন বৈপরীত দেখা যাচ্ছে।
ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যান গাড়ি মালিক ও শ্রমিক সূত্র জানা যায়, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে পণ্য পরিবহনের শতভাগ পুরোটাই পরিচালিত হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানিকৃত পণ্য দেশের নানা স্থানে নিয়ে যাওয়া এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পণ্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন আইসিডি এবং বন্দরের অভ্যন্তরে আনার ক্ষেত্রে ব্যবহƒত হয় ১০ হাজারের বেশি ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং প্রাইম মুভার। এছাড়া সারাদেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে পণ্য পরিবহন খাতে ২৫ হাজার ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং প্রাইমমুভার চলাচল করে। মূলত আমদানি হ্রাম ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্যবাহী ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যানে পণ্য পরিবহনে ব্যয়ে এমন বৈপরীত দেখা যাচ্ছে।
পণ্য পরিবহন শ্রমিকরা বলেন, কয়েক মাসে বন্দরের পণ্য পরিবহন গড়ে অন্তত ৩০ শতাংশ কমে গেছে। যেখানে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজারের মতো ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য নিয়ে চলাচল করত, তা এখন ৬ হাজারের নিচে নেমে এসেছে। আর প্রয়োজনীয় পণ্য না থাকায় ভাড়ার পরিমাণ একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। এছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর এই ভাড়া দিয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ট্রেইলর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক শেয়ার বিজকে বলেন, বেসরকারি কনটেইনার ডিপো থেকে আমদানি ও রপ্তানি পণ্যবাহী দেড় হাজার প্রাইম মুভার চলাচল করে। প্রতিদিন গড়ে ৫শ’র মতো প্রাইমমুভার বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করত। কিন্তু বর্তমানে তা দেড় থেকে দুইশতে নেমে এসেছে। আবার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ভাড়া ছিল ৪২ হাজার টাকা। আর বর্তমানে ভাড়া ৩২ হাজার টাকা। আবার একটি গাড়ি ঢাকা-চট্টগ্রাম আসা ও যাওয়া মাসে ৮ থেকে ৯ বার হতো। যা এখন ৩ থেকে ৪ বার হচ্ছে। অপরদিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী একটা লরির আগে ভাড়া ছিল ৩৫ হাজার টাকা। এখন ২৫ হাজার টাকা। আর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা বাড়া ছিল ২৫ হাজার। যা এখন ১৫ হাজার টাকা ভাড়া হয়েছে। অথচ জ্বালানি খরচ, লেবার খরচ এবং সেতু মাশুল বাড়ার পরও গাড়ির মালিকদের তেমন কিছু থাকে না। আমাদের অবস্থাও শোচনীয়। এভাবে কয়েক মাস চললে পুঁজি আর থাকবে না।
অপরদিকে চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বলেন, চট্টগ্রাম থেকে পণ্য নিয়ে ঢাকায় গেলে ফিরতি পথে চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য পণ্য পাওয়া যেত। এখন ডাউন ট্রিপ পাওয়া যাচ্ছে না। যেগুলো পণ্য নিয়ে ঢাকা বা দূরে যাচ্ছে সেগুলোও খুবই কম ভাড়ায় চলাচল করছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর যে পরিমাণ ভাড়া নেয়া হচ্ছে তাতে খরচ তোলাও অনেক সময় কঠিন হয়ে উঠছে। ফলে পণ্য পরিবহন সেক্টরে বিরাজিত বেহাল দশায় বিভিন্ন ব্যাংকের বিনিয়োগকৃত টাকা খেলাপি হবে।