জানুয়ারিতে শেষবারের মতো চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়ে ছিল। এরপর নানা চেষ্টা করা হলেও ১০ মিটারের জাহাজ আর জেটিতে আনা যায়নি। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দরের জেটিতে বর্তমানে সাড়ে নয় মিটার ড্রাফটবিশিষ্ট (পানির নিচে থাকা জাহাজের অংশ) জাহাজ ভিড়তে পারে। লন্ডনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইচআর ওয়েলিং পোর্ট বলছে, বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দরে এখনই ১০ মিটার ড্রাফটবিশিষ্ট জাহাজ ভেড়ানো যাবে।
আগের চেয়ে বেশি ড্রাফটের জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানো সম্ভব হবে। বন্দর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্ণফুলী নদীতে অনেক বাঁক আছে। এটি প্রাকৃতিক চ্যানেল। এর প্রাকৃতিক অবস্থান ধরে রাখা গেলে আগামী বছরের মধ্যে ১১ মিটার ড্রাফটের জাহাজ জেটিতে ভেড়ানো সম্ভব হবে। বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা গেলে নদীর প্রশস্ততা কমবে না। আগামী মাসে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম জেটি নির্মাণের কাজ শুরু হবে এবং তিন বছরের এ জেটি নির্মাণ শেষ হবে। ওই জেটিতে ১৮ মিটার ড্রাফটের এক লাখ টন ওজনের ধারণক্ষমতার জাহাজ ১০-১২ হাজার কনটেইনার নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারবে।
তিনটি সমুদ্রবন্দর থাকলেও দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য তথা আমদানি-রপ্তানির ৮০ শতাংশ এখনও সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। এ অবস্থায় এ বন্দরের সক্ষমতা কমে যাওয়া দুঃখজনক। মনে রাখতে হবে, আমদানিপণ্যের চালান সময়মতো সরবরাহ করা না গেলে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে পোশাকশিল্পের পণ্য জাহাজীকরণ বিঘিœত হলে বিদেশি ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বাতিলও করতে পারেন।
জেটি সংকট থাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি জাহাজ একসঙ্গে ভেড়ানো যায় না। ফলে বহির্নোঙরে দীর্ঘ সময় অলস বসে থাকতে হয় আমদানি পণ্যবোঝাই অনেক জাহাজকে। আবার বহির্নোঙরে পণ্য খালাসেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই জেটি সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।
খোলা পণ্যের একটি বড় অংশ বহির্নোঙরে লাইটারের (ছোট আকারের জাহাজ) মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। একটি মাদার ভেসেলকে (সমুদ্রগামী বড় জাহাজ) একদিন অতিরিক্ত সময় অবস্থানের জন্য প্রায় ১০ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হয়। জাহাজ মালিক ও এজেন্টরা এ অর্থ নেন আমদানিকারকদের থেকে। এতে পণ্যের আমদানিব্যয় বেড়ে যায়। আমদানিকারকরা নিজের পকেট থেকে ওই টাকা দেন না। পণ্যের মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে নেন। তাই ওই বাড়তি অর্থ শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ঘাড়েই চাপে। এ অবস্থায় বড় জাহাজ জেটিতে ভিড়তে না পারলে বিড়ম্বনা বাড়বে বৈকি! মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত যাতে বন্দর ব্যবহারকারীরা সমস্যায় না পড়েন, সে জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। পণ্য খালাস সক্ষমতা বাড়াতে আধুনিক যন্ত্রপাতি, পর্যাপ্ত লোকবলের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। মাতারবাড়ী বন্দর চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমলেও এ উপযোগিতা কমবে না। জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় দেশের প্রধান বন্দরটির অবদান ও গুরুত্ব বিবেচনা করে এটির সক্ষমতা বাড়তে হবে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বন্দরগুলোর প্রতিযোগিতা বেড়েছে। এ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।