সম্পাদকীয়: চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবহারকারীরা এটি ব্যবহারে কতটা সন্তুষ্ট কিংবা কী প্রতিবন্ধকতায় পড়েন, তারাই ভালো জানেন। তবে যখনই ‘চট্টগ্রাম বন্দর: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ নিয়ে আলোচনা হয় তারা চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ না থাকার বিষয়টি সামনে আনেন। এমন কোনো আলেচানায় সাধারণত উঠে আসে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথা। যেমন, বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের জন্য লাইটার জাহাজের সংখ্যা বাড়ানো এবং পণ্য খালাসের যন্ত্রপাতি ও ঘাটের আধুনিকায়ন করা; পণ্য খালাসের জন্য বন্দর ফটকের ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের কাজ করা; পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে যতটুকু সম্ভব বন্দরের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু করা; বন্দর চত্বর থেকে কনটেইনার পণ্য দ্রুত খালাসের জন্য কাস্টম হাউসে স্ক্যানারের সংখ্যা বাড়ানো প্রভৃতি। হয়তো পর্যায়ক্রমে আধুনিকায়নের কাজ চলছে।
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার। দেশের সিংহভাগ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয় এই বন্দর দিয়ে। তাই চট্টগ্রাম বন্দর স্থানীয় কোনো ইস্যু নয়। এটি জাতীয় বিষয়। চট্টগ্রাম বন্দর পিছিয়ে পড়লে দেশের অথর্নীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশ পিছিয়ে যাবে। বর্তমানে দেশে প্রতিনিয়ত ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে। সে ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর সক্ষমতা অর্জন করেছে, সেটি বলা যাবে না।
বন্দর জেটিতে কনটেইনারবাহী জাহাজগুলোকে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার বেশি অবস্থানের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। বন্দরে যন্ত্রপাতির সংকট ও বন্দর চত্বরে জটসহ নানা সমস্যার কারণে কিন্তু অনেক সময় ৬০ ঘণ্টা পর্যন্ত আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার নামাতে হয়। ফলে অনেক সময় জাহাজে রপ্তানি কনটেইনার পুরোপুরি বোঝাই করা যাচ্ছে না। রপ্তানি পণ্য না নিয়ে অনেক সময় জাহাজকে বন্দর ছেড়ে যেতে হচ্ছে। এ সমস্যা মোকাবিলায় রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার রাখার জন্য বন্দরে আলাদা চত্বর তৈরি করা প্রয়োজন। কিন্তু তা সা হওয়ায় জাহাজের মালিকেরা বাড়তি খরচ হলে তারা নিজেরা দেন না। তা আমদানিকারকদের পরিশোধ করতে হয়। আমদানিকারকেরা ভোক্তাদের কাছ থেকেই তা আদায় করেন। ফলে বোঝা যায়, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে দীর্ঘসূত্রতায় সাধারণ ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হন।
গতকাল শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে প্রকাশ, বন্দরে খালাস না হওয়া দীর্ঘদিনের পুরোনো পণ্য সরাতে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সমন্বয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পুরোনো নিলাম গোলায় পড়ে থাকা গাড়িসহ বিভিন্ন পণ্য ২০২৩ সালের জানুয়ারির দিকে নতুন নিলাম শাখার আঙিনায় স্থানান্তরিত হয়। স্টমসে অকশন শেডের আঙিনায় স্থানান্তরিত হওয়া ১৮২টি গাড়ির মধ্যে ৬১টি বিপরীতে মামলা ছিল। বাকি ১২১টি গাড়ির ধ্বংসের জন্য কাস্টমস বিআরটিএ থেকে অনাপত্তিপত্র চাইলে বিআরটিএ গাড়িগুলো ধ্বংসের জন্য সুপারিশ করে। তার মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ৭৪টি স্ক্র্যাপ করা হয়। কিন্তু গাড়িগুলো কেটে স্ক্র্যাপ করা হলেও প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় নিলাম করা যায়নি । স্ক্যাপ করা গাড়ি সরানো যাচ্ছে না। সেই সক্ষমতা আমাদের নেই। এটি ভালো লক্ষণ নয়। এটি আমাদের অক্ষমতার দৃষ্টান্ত হলে বিশ্বে নেতিবাচক বার্তা যাবে। বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকার প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তা দিলে সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব ।