Print Date & Time : 4 September 2025 Thursday 8:00 pm

চট্টগ্রাম বন্দরে সিগারেটের কনটেইনার জব্দ, ২১ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: বন্ড সুবিদায় আওতায় চীন থেকে সুতা ঘোষণায় পাবনার ঈশ্বরদীর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান তিয়ানে আউটডোর বিডি কোম্পানি লিমিটেড চট্টগ্রাম বন্দরে এনেছিল এক কনটেইনার বিদেশি সিগারেট। তবে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চালানটি আমদানি করলেও চট্টগ্রাম কাস্টম কর্তাদের তৎপরতায় শেষ রক্ষা হয়নি প্রতিষ্ঠানটির। সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) চালানটি জব্দ করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।

সূত্র জানায়, চীনের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ডিসিপ্রা প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এমভি এক্সপ্রেস কোহিমা জাহাজে করে পণ্যগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয়। তারপর চালানটি খালাসের জন্য চলতি মাসের ২২ তারিখে আমদানিকারকের পক্ষে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বিল অফ এন্ট্রি দাখিল করে চট্টগ্রামের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ক্রোনী শিপিং করপোরেশন প্রাইভেট লিমিটেড। কিন্তু আমদানিকারক পণ্য চালানে ৬৮০ কার্টনে ১৫ হাজার কেজি সুতা (৮৫% কটোন ইয়ান) আমদানির ঘোষণা দিলেও পুরো কনটেইনারে বিদেশি সিগারেট পাওয়া যায়। আমদানিকারক বিল অফ এন্ট্রিতে চালানটির আমদানি মূল্য দেখিয়েছে ১৬ হাজার ৩২০ মার্কিন ডলার অর্থাৎ ৮৫ দশমিক ৯৩১ টাকা বিনিময় হারে বাংলাদেশি টাকায় ১৫ লাখ ১১ হাজার ২৬৩ টাকা। যদিও এই চালানের প্রকৃত মূল্য অনেক বেশি। যা খালাসের জন্য আমদানিকারক গত ২৬ তারিখে চার লাখ ৬৮ হাজার ৪৯১ টাকা শুল্কও পরিশোধ করেছে। চালানটি আমদানির জন্য সাউর্থ ইস্ট ব্যাংক থেকে এলসি করা হয়েছিল।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রির্সাচ (এআইআর) টিম ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আওতায় রপ্তানিকারক, তৈরি দেশ, আমদানিকারকের ব্যবসায়ের ধরণ ও ঠিকানা, পণ্যের  বর্ণনা ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে পণ্য চালানটিতে অসত্য ঘোষণা পণ্য আমদানির বিষয়ে প্রাথমিক ধরণা লাভ করে। পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে ২৬ তারিখ পণ্য চালানটির খালাস কার্যক্রম স্থগিত করে এআইআর কর্তৃপক্ষ।

তারপর আজ সোমবার পণ্য চালানটি শতভাগ কায়িক পরীক্ষার জন্য কনটেইনার খুলে এআইআরটিম। তাতে দেখা যায় সবগুলো কার্টনে সিগারেট ভর্তি এবং তাতে এক কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার শলাকা সিগারেট পাওয়া যায়। এসব সিগারেটের মধ্যে এক কোটি ২৯ লাখ ৪০ হাজার শলাকা ওরিস সিলভার ব্র্যান্ড, ১৮ লাখ ৮০ হাজার শলাকা ওরিস গোল্ড ব্র্যান্ড, ১০ লাখ শলাকা ইজি গোল্ড ব্র্যান্ড, আড়াই লাখ শলাকা ডানহিল ব্র্যান্ড, দুই লাখ ৪০ হাজার ডানহিল সুইস ব্র্যান্ড, এক লাখ শলাকা ওরিস ডাবল আপেল ব্র্যান্ড, এক লাখ শলাকা ওরিস স্টবেরি, দুই লাখ ৬০ হাজার বেনসন অ্যান্ড হেজেস ও ৬০ হাজার শলাক মন্ড ব্র্যান্ডের সিগারেট পাওয়া যায়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য তিন কোটি ৬২লাখ টাকা। আর এই চালানের বিপরীতে রাজস্ব ফাঁকি হয় প্রায় ২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

এবিষয়ে জানতে চালান খালের দায়িত্বে থাকা সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ আজিমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ না কারায় তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

এই বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফখরুল আলম বলেন, পণ্য চালানটি শর্তসাপক্ষে আমদানিযোগ্য কিন্তু আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য চালানটি আমদানি করেছে। যাতে বিপুল পরিমান সরকারী রাজস্ব ফাঁকি হয়েছে। একই সাথে এই চালানে অর্থ পাচারও হয়ে থাকতে পারে। এই ঘটনার দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত চিহ্নিত করে  কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কঠোর নজরদারীতে অভিনব কায়দায় মিথ্যা ঘোষণায় আমদানিকৃত একাধিক সিগারেটের চালান আটক করা হয়েছে।