দেশের দ্বিতীয় প্রধান নগরী চট্টগ্রাম ও সংলগ্ন এলাকায় পানি সরবরাহ এবং পয়োনিষ্কাশনের দায়িত্ব চট্টগ্রাম ওয়াসার। তবে ওয়াসার পানি ও পয়োনিষ্কাশনে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি। লোকসংখ্যার বিপরীতে পানির চাহিদা দৈনিক প্রায় ৫০ কোটি লিটার। বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসা দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে, যা চাহিদার ৮৪ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যমান গ্রাহকদের ৯০ শতাংশের মধ্যে পানি সরবরাহ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি করছে। গত এক দশকে চট্টগ্রামের পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও অর্জনও কম নয়। পরিশোধিত পানির গুণগত মান এবং পানি শোধনাগারের কমপ্লায়েন্স অর্জনের ফলে চট্টগ্রাম ওয়াসা বাংলাদেশের প্রথম পানি সরবরাহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আন্তর্জাতিক মান সংস্থার সনদ পেয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চট্টগ্রাম শহরের শতভাগ নগরবাসীকে নিরাপদ ও সুপেয় পানি সরবরাহ করছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি অধিভুক্ত এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে পারছে কি না, তা চট্টগ্রাম মহানগরবাসীই ভালো জানেন। গতকাল শেয়ার বিজের পাঠকরা পেয়েছেন অন্য খবরÑ‘ডায়রিয়ার জীবাণু রয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে।’
আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকায় আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল গত ১৯ থেকে ২৫ আগস্ট সরেজমিনে রোগী, এলাকার পরিবেশ, পানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান চালায়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিআইটিআইডিতে আগস্টে মোট ৮৯৮ নতুন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়। এছাড়া কমিউনিটি পর্যায়ে তদন্ত দল আরও ১৩১ ডায়রিয়া রোগী শনাক্ত করে।
সম্প্রতি আইইডিসিআরের প্রতিবেদনটি চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ও চসিক মেয়রের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পাঠানো হয়।
পরিবেশবান্ধব, গণমুখী ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রাম ওয়াসা পরিচিতি পেয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহ করা পানি পান করে নগরবাসী যে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, এটি দুঃখজনক। বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বড় বিপাকে আছেন সাধারণ মানুষ। তাদের পক্ষে বিশুদ্ধ পানি কেনা দুষ্করই বটে। ওয়াসাকে পানির বিল দেবেন, আবার পানি কিনতেও হবে! ওয়াসার উচিত হবে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে মনোযোগ বাড়ানো, যাতে গ্রাহকদের খরচ আর না বাড়ে।
ওয়াসার পানি নিন্মমানের হওয়ায় গ্রাহকদের বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি পানের উপযোগী করতে হয়। বেশিরভাগ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে পান করেন। গৃহস্থালি পর্যায়ে পানি ফুটিয়ে পানের উপযোগী করতে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার গ্যাসের অপচয় হয়। পানি বিশুদ্ধ হলে এ অপচয় হতো না। আইইডিসিআর পানির জলাধার (ট্যাংক) নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করার লক্ষ্যে নগরবাসীকে সচেতন হওয়ার কথা বলেছে। নগরবাসী নিজেদের স্বার্থে তা করবে। কিন্তু ওয়াসার সীমাবদ্ধতায় যে দূষিত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে, তা নিরসন করতে হবে ওয়াসাকেই। চট্টগ্রাম ওয়াসায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি চালু করা গেলে নগরবাসীর জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ সম্ভব।