শেয়ার বিজ ডেস্ক: ব্যাংকিংখাতে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করছে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলো। অনুমোদনের সময় ব্যাংকের সংখ্যা নিয়ে সমালোচনা থাকলেও আর্থিক অন্তর্ভূক্তি, বিনিয়োগ, আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখছে এই ব্যাংকগুলো। চতুর্থ প্রজন্মের ৬ ব্যাংকে গচ্ছিত আমানতের পরিমান ৫৭ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৪৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আমানত সংগ্রহকারী ও ঋণ বিতরণকারী হচ্ছে এনআরবিসি ব্যাংক। আমানত ও ঋণে বিতরণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সাউথ বাংলা ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১৮ হাজার ৩৩৪ কোটি আমানত গচ্ছিত রয়েছে এনআরবিসি ব্যাংকে। সারাদেশের বিস্তৃত শাখা-উপশাখার মাধ্যমে গ্রাহক সেবা প্রদান করে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে ব্যাংকটি। এনআরবিসি ব্যাংক ঋণ বিতরণেও সবার শীর্ষে রয়েছে। ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের পরিমান ১৪ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা। এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, এনআরবিসি ব্যাংকের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর উদ্যোক্তারা সকলেই প্রবাসী। প্রবাসীদের স্বপড়ব হচ্ছে গ্রাম-বাংলার সাধারণ মানুষের উনড়বয়ন। এজন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে উপশাখা স্থাপন করে আমরা সেবা প্রদান করছি। সর্বত্র আমাদের উপস্থিতি এনআরবিসি ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এজন্যই আমাদের আমানতের পরিমান বেশি এবং ঋণের পরিমানও বেশি।
আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক। ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংকটির সংগৃহীত আমানতের পরিমান ৯ হাজার ৪০১ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে ব্যাংকটি ৮ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। গ্রাহক সেবা ও সার্বিক কার্যμম সম্পর্কে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, মানুষ তার কষ্টার্জিত আমানত ব্যাংকে রাখে সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং মুনাফা ভোগ করার জন্য । এসবিএসি ব্যাংক গ্রাহকদের
প্রয়োজন বুঝে যাবতীয় কার্যμম পরিচালনা করছে। এ জন্য ব্যাংকিং খাতে যখন তারল্যের ব্যাপক সঙ্কট চলছে তখনও আমরা গ্রাহকদের চাহিদা ভালোভাবেই মেটাতে সক্ষম হয়েছি। এসবিএসি ব্যাংকের কোনো গ্রাহক অর্থ উত্তোলনে সমস্যায় পড়েনি। আমরা আমানতের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার এবং ঋণ প্রদানে সঠিক গ্রাহক নির্বাচন করেছি। যা আমাদের টেকসই অগ্রগতি অর্জনে ভূমিকা রেখেছে। সামনের দিনগুলোতেও ব্যাংকিং নিয়মাচার যথাযথভাবে পরিচালন ও ঝুঁকির সঠিক মূল্যায়ন করেই এগিয়ে যেতে চাই।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা মধুমতি ব্যাংক ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে ৬ হাজার ৬০১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। আমানত সংগ্রহে মেঘনা ব্যাংক চতুর্থ অবস্থানে, তবে ঋণে বিতরণে ব্যাংকটির অবস্থান এনআরবি ব্যাংকের পরে। আলোচ্য সময়ে মেঘনা ব্যাংক ৭ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। ঋণ বিতরণ করেছে ৬ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে ৬ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণকারী এনআরবি ব্যাংকে গচ্ছিত আমানতের পরিমান ৭ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। এই প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে মিডল্যান্ড ব্যাংক ৬ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে ঋণ বিতরণ করেছে ৫ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে অনুমোদন পেয়ে চতুর্থ প্রজন্মের ৯ ব্যাংক। কার্যμমের কয়েক বছরের মধ্যেই নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বন্ধের উপμম হয় দি ফারমার্স ব্যাংক। বন্ধের পরিবর্তে নাম পাল্টে ব্যাংকটিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এখনও ধুঁকছে সেই পদ্মা ব্যাংক। এছাড়া আলোচিত এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ইউনিয়ন ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলাম ব্যাংক (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক) খেলাপি ঋণে জর্জরিত হয়ে মারাত্মক তারল্য সংকটে ধুঁকছে। তবে সমসাময়িক অন্য ৬টি ব্যাংক গ্রাহক সেবার মাধ্যমে আস্থা অর্জন করে কার্যμম চালিয়ে যাচ্ছে।