নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপানের প্রবৃদ্ধি পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। যদিও গত এপ্রিলে সংস্থাটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ছয় দশমিক দুই শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ দিয়েছিল। তবে সর্বশেষ প্রক্ষেপণে তারা জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে। একই সঙ্গে আর্থিক খাত ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক মাত্রায় সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা জানায় বিশ্বব্যাংক।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সরকার সাড়ে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে অর্থনীতিতে বর্তমানে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলোর বিবেচনায় সাড়ে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয় বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির মতে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। আগামী দিনেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। সংস্থাটি বলছে, মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি নির্ভর করবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য কেমন থাকে, তার ওপর।
বিশ্বব্যাংক আরও বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছর প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৬ শতাংশ। তবে মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে পারলে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক করা সম্ভব হলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুল্লায়ে সেক বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে। মানুষের ভোগও চাপের মুখে পড়েছে। এ ছাড়া মজুরি বৃদ্ধির তুলনায় খাবারের দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে মুদ্রানীতির কার্যকর ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে। বিশ্বব্যাংকের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সুদের হারের সীমা পর্যায়ক্রমে তুলে দিতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতের কার্যকর তদারকির মাধ্যমে আর্থিক খাতের ঝুঁকি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত। পাশাপাশি ডলার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার ওপর জোর দেন তারা।
আবদুল্লায়ে সেক উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্যের হার ছিল ৯ শতাংশ। ২০২২ সালে এটি পাঁচ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে, যা লাতিন আমেরিকার সঙ্গে তুলনীয়। দারিদ্র্য হ্রাস করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু এ অগ্রগতি ধরে রাখতে হলে ব্যাপক মাত্রায় সংস্কার কর্মসূচির ওপর জোর দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, কভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শক্তিশালী করতে হলে সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ওপর জোর দেন তিনি।