Print Date & Time : 3 August 2025 Sunday 11:33 pm

চলনবিলের পাবদা মাছ যাচ্ছে ভারতে

তাপস কুমার, নাটোর: উম্মুক্ত জলাশয়ের মাছ পাবদা। নাটোরের সিংড়ার চলনবিল এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সুস্বাদু পাবদা মাছের চাষ। খুব অল্প সময়ে বেকার যুবকরা এ চাষ করে নিজের পরিবারের অভাব দূর করছেন। অপরদিকে দেশের চাহিদা মিটিয়ে সুস্বাদু এ মাছ এখন রপ্তানি হচ্ছে ভারতের কলকাতা, মালদা, কাশ্মির, দার্জিলিং, মুম্বাইসহ পাঁচটি রাজ্যে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে শুধু ভারতে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ মাছ রপ্তানি করা সম্ভব বলে জানান রপ্তানিকারকরা। তারা জানান, দুই বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার মাছ রপ্তানি হয়েছে।

মৎস্য বিভাগ জানায়, খুব অল্প চাষির মধ্য দিয়ে শুরু হলেও এখন জেলায় পাবদা চাষির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০০ জনে। আর গেল মৌসুমে ৫০০ মেট্রিক টনের বেশি পাবদা উৎপাদিত হয়েছে। সামনের মৌসুমে উৎপাদন আরও বেশি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, বিভিন্ন বেসরকারি হ্যাচারি থেকে খামারিরা পোনা সংগ্রহ করে আনেন। পরবর্তীতে সেগুলো পুকুরে মিশ্র ও দানাদার খাবার খাইয়ে বড় করা হয়। সাধারণত এক বিঘা আয়তনের একটি পুকুরে দেড় লাখ টাকা খরচ করে প্রায় তিন লাখ টাকার মাছ বিক্রি করা যায়। পুকুর পাড় থেকেই গড়ে ৩৩০ টাকা কেজি দরে পাবদা বিক্রি হয়। সঙ্গে পানির পরিবেশ ঠিক রাখতে পুকুরে রাখা হয় অন্য জাতের মাছ।

খামারি তারেক হোসেন জানান, পাবদা মাছের গঠন ঠিক রাখতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয় দানাদার খাবার। বিক্রিতেও রয়েছে সুবিধা। ১৫০ কিংবা ২০০ মণ যে পরিমাণই মাছ ধরা হোক না কেন তা পুকুর পাড় থেকেই কিনে নিয়ে যান ঢাকা, বগুড়াসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বড় পাইকাররা। ফলে লাভ এবং বিক্রয় সুবিধা পাওয়ায় পাবদা চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে।

মৎস্য চাষিরা জানান, অন্যান্য ব্যবসা কিংবা পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে সহজে পাবদা মাছ চাষ করা যায়। বছরে কেউ কেউ প্রায় আড়াই লাখ টাকার পাবদা মাছ বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান। পাবদা মাছের সঙ্গে আরও অন্যান্য মাছের চাষ করতে হয় পানি ঠিক রাখার জন্য, যাকে বলে মিশ্র চাষ।

পাবদা চাষি মো. মাহাবুব রহমান জানান, পাবদা মাছ চাষে বর্তমানে আগ্রহ বাড়ছে। এ মাছ বিক্রি করতে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। মাছ পুকুর পাড় থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে অনেক চাষি এখন এ মাছ চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। তিনি আরও জানান, মৎস্য বিভাগ বিভিন্নভাবে ট্রেনিং দিচ্ছে, কোনো সমস্যা দেখা দিলে তারা পুকুরের পানি পরীক্ষাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

রপ্তানিকারক রিগান হোসেন বলেন, প্রতি বছর চলনবিল এলাকা থেকে ৫০০/৬০০ মেট্রিক টন পাবদা বিভিন্ন জেলা এবং ভারতে রপ্তানি করা হচ্ছে। এ মাছ সাত দিন ভালো থাকে। স্থানীয়ভাবে প্যাকেটজাত হয়ে বেনাপোল হয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চলে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের কোথাও চাঁদাবাজির শিকার হতে হয় না। খুব সহজে গাড়ি জেলায় জেলায় যায়। তিনি এ মাছ আরও অনেক দেশে রপ্তানি করতে সরকারি শুল্ক কমানোর পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কৃষির যেকোনো সেক্টরের তুলনায় পাবদা চাষ লাভজনক। এ চাষ বৃদ্ধিতে নিয়মিত খামারিদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বিক্রিতেও সহযোগিতা করছে মৎস্য বিভাগ। উৎপাদিত এসব পাবদা মাছ ভারতে এলসির মাধ্যমে পাঠানো হয়। পাশাপাশি ঢাকাসহ দেশীয় বিভিন্ন বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় ভালো লাভবান হচ্ছেন খামারিরা।’

তিনি জানান, সাধারণত মার্চের শুরুতে পুকুরে পাবদা পোনা ছাড়া হয় এবং ছয় মাস পর থেকে তা সংগ্রহের উপযোগী হয়। রপ্তানির পাশাপাশি দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় পাবদা খামারিরা লাভবান হচ্ছেন।