নিজস্ব প্রতিবেদক: বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার প্রক্রিয়ায় আগামী ১৯ আগস্ট থেকে কয়েকটি শর্তে পর্যটন কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্রও খুলে দিচ্ছে সরকার। সেদিন থেকে সব গণপরিবহন সড়কে নামতে পারবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপনে বলেছে, দেশের ‘আর্থসামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে’ এসব ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিল করা হচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে।
কভিড-১৯-এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের বিধিনিষেধ ১১ আগস্ট থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তুলে নেয়া হয়েছিল।
সেদিন থেকে সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান ও দোকানপাট খোলা, আর শিল্পকারখানা খোলা রয়েছে গত ১ আগস্ট থেকে। ১১ আগস্ট থেকে আসনসংখ্যার সমান যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চালু করার অনুমতি দেয়া হলেও প্রত্যেক এলাকায় প্রতিদিন মোট যানবাহনের অর্ধেক গাড়ি রাস্তায় নামানোর শর্ত দেয়া হয়েছিল। এখন সেই শর্ত আর থাকছে না।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১৯ আগস্ট থেকে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সড়ক, রেল ও নৌপথে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে।
সব ধরনের পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র এতদিন বন্ধই ছিল। ১৯ আগস্ট থেকে সেসব আবার খোলা যাবে। তবে শর্ত হলো, আসন বা ধারণক্ষমতার অর্ধেক খালি রাখতে হবে।
পাশাপাশি সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরা নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে বলে বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলেছে, ‘যে কোনো প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অবহেলা পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব বহন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এখন শপিং মল, মার্কেট ও দোকানপাট সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে খোলা রাখার অনুমতি আছে। আর খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ অর্ধেক আসন খালি রেখে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যায়। এ নিয়মে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর গত বছর ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সেসব খোলার বিষয়ে এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি।
সবশেষ গত ২৯ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছিল। আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সবাইকে টিকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়ার পরিকল্পনার কথা বলা হচ্ছিল সরকারের তরফ থেকে।
মহামারির দেড় বছরের মধ্যে জুলাইয়ে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পার করেছে বাংলাদেশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ১ জুলাই দেশে লকডাউন জারি করা হলেও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে কোরবানির ঈদের সময় ৯ দিন তা শিথিল করা হয়েছিল।
ঈদের ছুটির পর ২৩ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত আবার লকডাউন চললেও তার মধ্যেই দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড দেখেছে বাংলাদেশ। ১ আগস্ট সব ধরনের রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দেয়া হয়েছে।
মানুষকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য সরকার এখন জোর দিচ্ছে টিকাদানে। গত শনিবার থেকে ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে ছয় দিনের গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছিল, যা বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে। এ কর্মসূচিতে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া মিললেও এখন সবার জন্য টিকার জোগান নিয়ে চিন্তাও করতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের।