“চলো যায় যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধ”

প্রতিনিধি, মেহেরপুর: মেহেরপুরে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও পরার্থ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে, ধূমপান ও মাদকের কুফল পরিণতি বেঁচে থাকার উপায়, শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত।

মেহেরপুরে জেলার সুবিদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও পরার্থ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে “চলো যায় যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে” স্লোগানকে সামনে রেখে আলোচনা সভা হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মো: মিজানুর রহমান, সদর থানা ভারপ্রাপ্ত ওসি সেলিম রেজা , আবুল হোসেন পরিদর্শক সদর থানা মাদক অধিদপ্তর কার্যালয়, চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পরিদর্শক সুলাইমান হোসেন, অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহাবুল ইসলাম সহ শিক্ষকমন্ডলীগন ও পরার্থের জেলা প্রতিনিধি রাহিদুজ্জামান প্রমুখ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় মিজানুর রহমান বলেন প্রসাশনের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে ধূমপান ও মাদক বন্ধের জন্য এগিয়ে আসতে হবে সকলকে। জন্য আমাদের প্রয়োজন সামাজিক সচেতনা। তাহলেই আমরা আগামী প্রজন্মকে মাদকমুক্ত, দেশপ্রেমিক, দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো। নিষিদ্ধ জগতে অস্ত্রের পর মাদকই সবচেয়ে লাভবান ব্যবসা। বিশেষ করে ফেনসিডিল ও ইয়াবা সহজলভ্য ও বহনযোগ্য বলে এর বিস্তার দেশজুড়ে। সত্যি বলতে কি দেশের এমন কোনো এলাকা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে মাদকের থাবা নেই। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষজন মাদককারবারের সাথে জড়িত। তারা বিভিন্ন কলাকৌশলের আশ্রয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে। সত্যি বলতে কি দেশজুড়ে এক বিশাল জাল বিস্তার করে আছে এই মরণ নেশার ভয়াবহ সিন্ডিকেট।

সদর থানা ভারপ্রাপ্ত ওসি সেলিম রেজা বলেন, মাদকের রয়েছে বিভিন্ন রুট। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর, সীমান্ত এলাকায় মাদকের ছড়াছড়ি। এর কিছু ধরা পড়ে। বাকিটা চলে যায় মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের কাছে। রাজধানীতেও মাদকব্যবসা রমরমা। মাদকের জগতে এক সময় ‘হেরোইন’ নামক মরণ নেশা ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছিল। এ পদার্থটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ করে অবধারিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। এটি খুব দামি বলে পরবর্তী সময়ে এর স্থান দখল করে নেয় ফেনসিডিল ও ইয়াবা। বর্তমান নেশাসক্ত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এ দুটি নেশাদ্রব্য বেশি জনপ্রিয়। একে ঘিরে দেশব্যাপী গড়ে উঠেছে বিশাল নেটওয়ার্ক। ফেনসিডিলের চেয়ে ইয়াবাই বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পরিদর্শক সুলাইমান হোসেন বলেন, মাদকের বিস্তার এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, এখন এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার কোনো বিকল্প নেই। শুধু মেহেরপুর শহরেই নয়, গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে মাদক। তার বিষাক্ত ছোবল শেষ করে দিচ্ছে তারুণ্যের শক্তি ও অমিত সম্ভাবনা। ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের অবক্ষয়, প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির অসামঞ্জস্যতা, হতাশা এবং মূল্যবোধের অভাবের সুযোগ নিয়ে মাদক তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তরুণ সমাজের প্রতি। বেকারত্বও মাদকের বিস্তারে সহায়ক-এমন কথাও বলছেন বিশ্লেষকরা। এই মরণ নেশার বিস্তারে সমাজে একদিকে যেমন অপরাধ বাড়ছে, তেমনিভাবে নষ্ট হচ্ছে সামাজিক শৃঙ্খলা।
এই অবস্থা চলতে থাকলে একটি সমাজের অন্ধকারের অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না। আশার কথা যে প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে এবার নড়েচড়ে বসেছে। গত কয়েক দিনে এক হাজারেরও বেশি মাদক বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মামলা হয়েছে। মাদক বিক্রেতাদের ধরতে গিয়ে বন্দুকযুদ্ধের মুখেও পড়তে হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে। মাদককারবারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই।