চাঁদপুরে প্রকল্পের কাজ চলছে মন্থরগতিতে

বেলায়েত সুমন, চাঁদপুর: কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) বাস্তবায়নাধীন এডিপিভুক্ত ৬৮ প্রকল্পের একটি কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প। কৃষি জমিতে সেচ ও সেচ এলাকা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ক্ষুদ্রসেচ উইংয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে শুরু হয় প্রকল্পের কার্যক্রম। প্রতি বছর কাগজে কলমে প্রকল্পের অগ্রগতি শতভাগ দেখানো হলেও চাঁদপুরে নানা অনিয়ম, অস্বচ্ছতা ও মন্থরগতিতে চলছে প্রকল্পের কার্যক্রম।

প্রকল্পের মাধ্যমে খাল পুনঃখনন, ভূপরিস্থ সেচ নালা, ভূগর্ভস্থ সেচনালা নির্মাণ, রাবার ড্যাম নির্মাণ, হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম, ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ, সেচ অবকাঠামো নির্মাণ, শক্তিচালিত পাম্প স্থাপন, গভীর নলকূপ স্থাপন ও পুনর্বাসন, আর্টসিয়ান নলকূপ স্থাপন, সৌরশক্তিচালিত পাম্প ও ভাগওয়েল স্থাপন, সেচ এলাকায় ইউনিট অফিস কাম ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ করার কথা। কিন্তু দুই বছরেও কোনো ইউনিট অফিস কাম ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন না করেই চলছে প্রকল্পের কার্যক্রম। চলতি মাসে একটি ইউনিট অফিস কাম ট্রেনিং সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও কচুয়া উপজেলার ইউনিট অফিস কাম ট্রেনিং সেন্টারটি এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি।

অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে কচুয়ায় খাল পুনঃখনন করা হয়েছে তিন কিলোমিটার ১৮০ মিটার, হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার নির্মাণ করা হয়েছে একটি, এলএলপি ক্ষেত্রায়ন করা হয়েছে মাত্র দুই হাজার মিটার, ব্যারিড পাইপ সম্প্রসারণ করা হয়েছে চার কিলোমিটার ২০০ মিটার। খাল পুনঃখননের নামফলকে বরাদ্দ প্যাকেজ মূল্য উল্লেখ না করে নির্ধারিত এলাকায় নামফলক বসানো হয়েছে। কত কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হয়েছে তাও উল্লেখ করা হয়নি নামফলকে।

অভিযোগ উঠেছে, নামমাত্র খাল পুনঃখনন করেই প্রকল্পের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তা-ব্যক্তিরা।

হাজীগঞ্জ উপজেলায়ও নামমাত্র কুচির খাল পুনঃখনন করা হয়েছে। খাল খননের পর খালের পাশে একটি নামফলক লাগানো হয়। সেখানে নামফলকে কাজের অবস্থান উল্লেখ করা হয় ইউনিয়ন চর দরবেশ হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর। যদিও হাজীগঞ্জ উপজেলায় চর দরবেশ নামে কোনো ইউনিয়ন নেই। নামফলক সম্পর্কে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চাইলে এক দিন পর গায়েব হয়ে যায় কুচির খালের পুনঃখনন সংবলিত নামফলক।

কুচির খালের শাখা খালগুলোর পাশে খাল পুনঃখননের সাইনবোর্ড ঝুললেও বেশিরভাগ শাখা খালে এক টাকারও কাজ হয়নি অনুসন্ধানকালে পাওয়া গেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। এছাড়া রুইতের বিল, জমজমিয়া খাল, সোনাইবিবি খাল পুনঃখনন করা হলেও নামফলকে প্যাকেজ মূল্য উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি খালগুলো নামমাত্র খনন করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

শাহরাস্তি উপজেলার সূচিপাড়া উত্তর ইউনিয়নের শোরশাক মৌজায় বিএডিসি সেচ বিভাগ কুমিলার আওতায় এলএলপি স্কিমে এক হাজার মিটার ব্যারিড পাইপ নির্মাণ করে কুমিল্লার মধ্য আশ্রাফপুরের মেসার্স বিপ্লব সিন্ডিকেট নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজের অবস্থানস্থলে সাইনবোর্ডে সব প্রকল্পের সব ফিরিস্তি উল্লেখ থাকলেও নেই প্রকল্পের প্যাকেজ মূল্যের ব্যয়ের বিবরণ।

একই উপজেলার টামটা দক্ষিণ ইউনিয়নের কুলশি মৌজায় বিএডিসি সেচ বিভাগ চাঁদপুরের আওতায় মাঝারি আকারের হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার নির্মাণ করে ঢাকার বড় মগবাজারের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাহানারা এন্টারপ্রাইজ। হাইড্রোলিক স্ট্রাকচারের পাশে প্রকল্পের নামসর্বস্ব সাইনবোর্ড থাকলেও নেই স্ট্রাকচার নির্মাণে প্যাকেজ মূল্যের ব্যয়ের কোনো তথ্য।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ বিএডিসি (ক্ষুদ্রসেচ) উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মামুনুর রশীদের সঙ্গে কয়েকবার মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও প্রকল্প-সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তিনি ফোন বন্ধ রেখেছেন এমনকি অসংখ্য বার অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

প্রকল্পে কুচির খাল খননে অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে চাঁদপুর জেলা বিএডিসি (ক্ষুদ্রসেচ) সহকারী প্রকৌশলী আফিদ কামরুল আশ্রাফি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কত কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হবে প্রকল্প নামফলকে সেটা উল্লেখ করার কথা বলা হয়নি। আমি একটু ব্যস্ত আছি পরে কথা বলি’, বলেই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের পিডি অফিসে (কুমিল্লা) গিয়েও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট। এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক মো. মিজানুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের প্রতিটি কাজে স্বচ্ছতা রয়েছে। কোথাও কোনো অনিয়ম হয়েছে বলে মনে হয় না। ইউনিট অফিস কাম ট্রেনিং সেন্টার কচুয়ায় হওয়ার কথা থাকলেও অফিসে যাওয়ার রাস্তা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সেটি হতে দেরি হচ্ছে। চাঁদপুরে আমরা একটি ইউনিট অফিস কাম ট্রেনিং সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছি।