নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজস্ব ফাঁকি রোধে অপ্রতিরোধ কুমিল্লা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। জিরো টলারেন্সের আওতায় চলছে সাঁড়াশি অভিযান। আটক হচ্ছে একের পর এক রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া পণ্যের চালান। এরই অংশ হিসেবে চাঁদপুর থেকে প্রায় ছয় লাখ নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া বিড়ি ও সিগারেট আটক করা হয়েছে।
এ কমিশনারেটের আওতাধীন চাঁদপুর ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা সিগারেটের বিশাল এ চালান আটক করেছে। এ বিষয়ে একটি মামলা করা হয়েছে, যা এ কমিশনারেটের সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় মামলা। বুধবার (২৯ জুলাই) কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী শেয়ার বিজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
## সাম্প্রতিক কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেটের বৃহৎ মামলা
## কুমিল্লা ও নোয়াখালীর কুরিয়ার সার্ভিসগুলোকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে

একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব ফাঁকি দিতে নকল ও ব্যবহৃত ব্যান্ডরোলযুক্ত সিগারেট বাজারজাত করে আসছে। এর ফলে রাজস্ব প্রদানকারী সিগারেট ও বিড়ি কোম্পানিগুলো লোকসান গুনছে। নতুন কমিশনার যোগদানের পর থেকে অবৈধ, নকল ও ব্যবহৃত ব্যান্ডরোলযুক্ত বিড়ি-সিগারেটের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর নির্দেশ দেয়।
এরই অংশ হিসেবে ২৬ জুলাই প্রথমবার ফেনী থেকে সাড়ে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া বিড়ি ও সিগারেট আটক করা হয়। একটি কুরিয়ার সার্ভিস থেকে এসব আটক করা হয়। ফেনী ভ্যাট বিভাগের ইতিহাসে এত বড় চালান আর আটক হয়নি।
আরো পড়ুন-ফেনীতে সাড়ে তিন লাখ অবৈধ সিগারেট-বিড়ি আটক
কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, কমিশনারের কাছে প্রাপ্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সহকারী কমিশনার (এসি) ফখরুদ্দিনে নেতৃত্বে একটি টিম চাঁদপুর পুরান বাজার এলাকা থেকে চার লাখ ৪৫ হাজার সিগারেট ও এক লাখ ৪০ হাজার অবৈধ সিগারেট আটক করে। এসব সিগারেট ও বিড়িতে নকল ব্যান্ডরোল লাগানো ছিল।

তিনি বলেন, নকল, ভুয়া ও জাল ব্যান্ডরোল দিয়ে সিগারেট বাজারজাত করার কারণে দেশের স্থানীয় সিগারেট ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ হতে চলেছে। শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ নষ্টের সাথে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ করেছে দেশিয় বিনিয়োগে বৃহৎ সিগারেট উৎপাদক প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড। দেশিয় এসব প্রতিষ্ঠানর মালিক ও শ্রমিককে বাঁচাতে হলে নকল, ভুয়া ও জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
কমিশনার বলেন, কুমিল্লা কমিশনারেট এসব নকলবাজ দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। বৃহত্তর কুমিল্লা নোয়াখালীর কোথাও এমন কিছু দেখলে বা খবর পেলে কমিশনারকে জানাতে বলা হয়েছে। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে সমাজ থেকে এসব চোরাকারবারি ও জালিয়াত চক্র নির্মুল করতে হবে। কুমিল্লা ও নোয়াখালীবাসীর আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।
তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে সকল বিভাগ ও সার্কেলসমূহের ঢেলে সাজানো হচ্ছে। নিজস্ব পদ্ধতিতে নির্ধারিত হচ্ছে কর্ম পরিকল্পনা, তৎপরতা ও বাস্তবায়ন। বিভিন্ন জায়গায় নিয়োজিত করা হয় ইনফর্মার। এতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আসে প্রথম সাফল্য আসতে শুরু করে। গোপন সংবাদদাতার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করে কার্যোদ্ধার করা হয়েছে। কুমিল্লা ও নোয়াখালী শহরের কুরিয়ার সার্ভিসগুলোকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২৮ জুলাই সকাল থেকে ওঁত পেতে থেকে পাহারা দেয়া হয়। ইনফর্মার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছিল। সকাল পৌনে দশটার দিকে মূল অপারেশন শুরু হয়। কমিশনারের সাথে সার্বক্ষক্ষিক যোগাযোগ করে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ, চাঁদপুরের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. ফখরউদ্দীন এর নেতৃত্ব দেন।
সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ, মো. শাহজাহান ও মো. ফারুক আহমেদ, সিপাহী মো. সানাউল্লাহ ও ড্রাইভার মো. মানিক সমন্বয়ে বিভাগীয় নিবারক দল নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত চার লাখ ৪৫ হাজার ৬০০ শলাকা ফাইভ ফাইভ সিগারেট ও এক লাখ ৪০ হাজার শলাকা যমুনা বিড়ি আটক করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪০ টাকা। রাজস্ব ফাঁকির পরিমান মূসক ২ লাখ ৩৯ হাজার ৮২১ টাকা ও সম্পূরক শুল্ক ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৮৬৬ টাকা। মোট রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ ৮ লাখ ৮ হাজার ৬৮৭ টাকা।
সমগ্র কুমিল্লা কমিশনারেটের অধীন বিভাগ ও সার্কেল কর্মকর্তাদেরকে সকল অবৈধ ও চোরচালানবিরোধী অভিযান জোরদার করতে বলা হয়েছে। এ লক্ষ্যে তাদেরকে প্রতিষ্ঠান যানবাহনে প্রবেশ, তল্লাশি, আটক ও জব্দ করণের ক্ষমতা প্রদান হয়েছে বলেও জানান কমিশনার।
###