জহুরুল ইসলাম জহির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জে আগাম জাতের শীতকালীন (কন্দ) পেঁয়াজ চাষ করে সফল এ জেলার কৃষকরা। জেলাজুড়ে এ বছর ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে শীলকালীন (কন্দ) জাতের পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ না আসা ও নায্য দাম পেলে ভালো লাভের আশা। এ জাতের পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকরা লাভবান। আর কৃষি বিভাগ বলছেন, আগাম জাতের পেঁয়াজ বাজারে আসলে পেঁয়াজের দাম সাশ্রয় হবে। কৃষকদের বিভিন্নভাবে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছেন কৃষি বিভাগ।
সীমান্তবর্তী জেলার মাঠজুড়ে শীতকালীন কন্দ জাতের পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে। এ যেন সবুজের সমারহ। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর মাঠ কে মাঠ শীতকালীন (কন্দ) আগাম জাতের পেঁয়াজ লাগান কৃষকরা। অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে এ জাতের পেঁয়াজ রোপণ করেন ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এ পেঁয়াজ বাজার উঠতে শুরু করবে।
কৃষক মজিবুর রহমান জানান, আগাম জাতের পেঁয়াজের বীজ লাগানো আছে। সামনের ডিসেম্বরে জমি থেকে পেঁয়াজ উঠানো হবে। আমার মতো অনেক কৃষকই প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম পেতে পারে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার পর্যন্ত। তবে সর্বনিম্নে ২ হাজার টাকা পেঁয়াজের দাম পেলেও আমরা যারা পেঁয়াজ চাষ করছি তাও লাভ থাকবে। আমাদের এ মাঠের শুধুই পেঁয়াজ চাষবাদ হয়ে থাকে। এখন সবাই কৃষক পেঁয়াজের পেছনে সময় ব্যয় করছে— ভালো ফলনের আশায়।
কৃষক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ছয় বিঘা আগাম জাতের পেঁয়াজ লাগিয়েছি। প্রতি বিঘা পেঁয়াজে ১ লাখ ২০ হাজার খরচ হলেও খরচ হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ৯০ থেকে ১০০ মণ পেঁয়াজ পাওয়া যায়। খরচ বাদসাদ দিয়ে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা লাভ থাকবে প্রতি বিঘাতে। এ বছর আমার সবগুলো জমিতে আগাম জাতের পেঁয়াজ খুব ভালো হয়েছে। কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না হলে বেশ ভালোই লাভ হবে।’
কৃষক মতিউর রহমান জানান, আমরা লাভের আশায় লাগালেও আমরা লাভ করতে পারছি না। কারণ পেঁয়াজ উঠানোর সময় হঠাৎ করেই ভারত থেকে পেঁয়াজ আসে এবং সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম কমে যায়। তাই পেঁয়াজ আগাম জাতের পেঁয়াজ উঠানোর সময় যাতে কোনো ধরনের ভারতীয় পেঁয়াজ না আসে। তা না হলে আমরা লোকশনের মধ্যে পড়ে যাব। এ জাতের পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকরা যাতে কোনো রকম লোকশানে না পড়েন সেদিকে নজর রাখার পাশাপাশি নায্য দাম নির্ধারণ করে দেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
কৃষক হাসিব জানান, শীলকালীন কন্দ জাতের পেঁয়াজে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক স্প্রেসহ নিড়ানির কাজ করা হচ্ছে। স্প্রে করা হচ্ছে যাতে কোনো ধরনের পোকা বা মাড়ক না লাগে। স্প্রে ও কীটনাশকের দাম এ বছর একটু বেশি মনে হচ্ছে। সেই সঙ্গে গত বছরের তুলোনায় এ বছর দ্বিগুণ টাকা দিয়ে পেঁয়াজের বীজ ক্রয় করা হয়েছে। আমরা আগাম জাতের পেঁয়াজের বীজ পেতে চাই কৃষি বিভাগের কাছে।
কৃষক বাবুল আক্তার জানান, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি না। এখন পর্যন্ত কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা দেখা যায়নি। কোনো পরামর্শও পাওয়া যায়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান, আগাম জাতের শীতকালীন কন্দ জাতের পেঁয়াজ বাজারে আসলে পেঁয়াজের দাম সাশ্রয় হবে। কৃষকদের বিভিন্নভাবে সার্বিক সহযোগিতার করে আসছেন কৃষি বিভাগ। তিনি আরো জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় চলতি বছরে শীতকালীন আগাম জাতের কন্দ পেঁয়াজ ও ছাচি পেঁয়াজ চাষাবদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে।