পাঠকের চিঠি
বয়স নয়, মেধার বিচার হোক দক্ষতায়। বর্তমান বাংলাদেশে মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার সবচেয়ে বেশি অপচয় হচ্ছে। এখন দেশে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে সাধারণ প্রার্থীদের ৩০ বছর এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বয়সসীমা ৩২ বছর। বহিঃবিশ্বের যেখানে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অবারিত, সেখানে আমাদের দেশে লাখো কোটি ছাত্র সমাজকে ৩০-এর বেড়াজালে বন্দি করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বর্তমান বয়সসীমা বিশ্বের ১৬২টি দেশের সর্বনি¤œ বয়সের চেয়েও পাঁচ বছর কম। যদি একটু বহিঃবিশ্বের পরিসংখ্যানটা দেখি তাহলে দেখা যায় ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো উন্নত দেশে চাকরির সর্বোচ্চ বয়স ৪০ থেকে ৫৯ বছর। উন্নত দেশ ফ্রান্সেও চাকরির বয়স ৪০ বছর। এছাড়া চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ৫৫ বছর রাখা হয়েছে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে। এদেশগুলোর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইন, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কাতার, ওমান ও কুয়েতসহ বেশকিছু দেশ। একমাত্র দেশ সুইডেন চাকরির বয়স ৪৭ বছর রেখেছে। চাকরির বয়স ৪৫ রেখেছে যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কা। এছাড়া চাকরির সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ বছর রেখেছে কাতার, তাইওয়ান, ইতালি ও নরওয়েসহ উল্লেখযোগ্য বেশ কয়েকটি দেশ। হাতে গোনা বিশ্বের কয়েকটি দেশে চাকরির সর্বনি¤œ বয়স ৩৫ বছর হলেও বাংলাদেশে তার চেয়েও কমিয়ে ৩০ বছর রাখা হয়েছে। দেশের গড় আয়ু, মাথাপিছু আয়সহ সার্বিক সূচক বাড়লেও বাড়ানো হয়নি এ বয়সসীমা; যা দেশের লাখো বেকারের কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের সবকিছু যখন এগিয়ে যাচ্ছে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো মেগা প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার এ সময়ে চাকরির বয়স ৩০ বছরে আটকে রাখা হয়েছে। বর্তমান বিধি অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩২ বছর। অর্থাৎ সাধারণ ক্ষেত্রে বয়স ৩০ বছর পার হলে আর কেউ সরকারি চাকরির জন্য দরখাস্ত করতে পারবেন না। তাকে দৌড়াতে হবে বেসরকারি চাকরি, ব্যবসা বা অন্য কোনো উপায়ে রুটিরুজি জোগাড়ের দিকে। একজন শিক্ষার্থীর সেশনজটের বেড়া ডিঙ্গিয়ে স্নাতক/স্নাতকোত্তর শেষ করতেই বয়স ২৭ বা ২৮ বছর হয়ে যায়। এরপর চাকরির প্রস্তুতি নিতে নিতেই বয়স ৩০ এর কাছাকাছি এসে পড়ে। একজন শিক্ষার্থী যদি ২৩ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে শিক্ষা জীবন শেষ করতে পারতেন, তাহলে চাকরিতে প্রবেশের বয়সমীমা ৩০ বছর ঠিকই ছিল। কিন্তু ?শিক্ষা জীবন শেষ করতে আরও দুই তিন বছর বেশি লাগছে। এর মধ্যে আবার রকমফের আছে। তার ওপর কভিড মহামারির কারণে দুটি বছর এমনিতে চলে গেল। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা না বাড়ানোর কারণে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার অনেকে বলছে, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ালে অবসরের বয়সও বাড়াতে হবে। কিন্তু কথা হচ্ছে সরকারের যদি স্বদিচ্ছা থাকে তাহলে বয়স বাড়ানো সম্ভব। গ্রামের একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরলে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর যুক্তিটা আরও পরিষ্কার হবে। একই সঙ্গে পড়াশোনা করে কিছু তরুণ কৃষি, খামার ও ব্যবসা শুরু করেছিল। তারা ৩০-৩২ বছরের মধ্যে সংসার, পাকাবাড়িসহ ১০-১৫ লাখ টাকা সঞ্চয় করেছে। অথচ, তার সঙ্গে যে তরুণটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে চাকরির আশায় সময় পার করেছে সে এখনও বাবার ওপর নির্ভরশীল অথবা সবকিছু শুরু হচ্ছে মাত্র। আমরা দেখি বিসিএসের চাকরিতে আবেদন করেন কয়েক লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী। কিন্তু সাধারণ পদ ১০০০-১৫০০ মাত্র বা তার কম বেশি। অথচ উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর থেকে একজন ছাত্রছাত্রী আশায় থাকেন এই অসম্ভব বাস্তবতার দিকে। আবার অনেকে আশায় থাকেন সে একটা সরকারি চাকরি করবে। দেখা যায় শেষ পর্যন্ত আশাভঙ্গ হয়, জীবন থেকে মূল্যবান স্বর্ণালি সময় নষ্ট হয়। দেখা যায় সে স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় অনেকে মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে প্রতি বছর বাংলাদেশের মোট কর্মসংস্থানের মাত্র ৩.৮ শতাংশ সরকারি চাকরি, বেসরকারি ১৪.২ শতাংশ, ব্যক্তিমালিকানাধীন ৬০.৯ শতাংশ এবং অন্যান্য ২১.১ শতাংশ। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০৪১ এর মধ্যে উন্নত দেশ হতে গেলে এ বিশাল তরুণ প্রজš§কে কর্মে নিয়োজিত করতে হবে। দেশের শ্রমবাজারে প্রতি বছর ২০-২২ লাখ তরুণ যুক্ত হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি খাত, ব্যক্তি মালিকানাধীন খাত, উদ্যোক্তা-উন্নয়ন এবং বিদেশে শ্রমবাজার মিলিয়ে প্রায় ১০-১১ লাখের মতো নতুন কর্মসংস্থান সম্ভব হয়। বাকি ৯-১০ লাখ তরুণ কর্মহীন। এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে কর্মে যুক্ত করার জন্য কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমাও বাড়াতে হবে। গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে চাকরিতে অবসরের সীমা বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু প্রবেশের বয়স বাড়ানো হয়নি। সেশনজট এবং করোনা মহামারির কারণে ছাত্ররা ক্ষতিগ্রস্ত। ৩৫ দাবিটি বাস্তবায়িত হলে লাখ লাখ ছাত্র উপকৃত হবে।
এম আবুল ফয়েজ মামুন, ঢাকা