Print Date & Time : 14 September 2025 Sunday 10:26 pm

চাকরির বাজারোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা চালু হোক

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা বিবেচনায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক পেশাগত প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নপূর্বক শ্রমশক্তির দক্ষতা উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। গত নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে তরুণদের প্রাধান্য দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের মধ্যে দেড় কোটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। ওই সময়ের মধ্যে নতুন করে প্রায় এক কোটি ১১ লাখ তরুণ-তরুণী শ্রমশক্তিতে যুক্ত হবে। সরকার দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে কর্মক্ষম জনগণের দক্ষতা উন্নয়ন পদ্ধতি উদ্ভাবন, সংস্কার, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন করেছে, কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে।

শনিবার বেসরকারি গবেষণা সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, চাকরির বাজারের সঙ্গে প্রচলিত শিক্ষার অসামঞ্জস্য রয়েছে। গতকাল শেয়ার বিজে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা চাকরির বাজারের চাহিদা মোতাবেক জনশক্তি তৈরি করতে পারছে না। বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থায় তৈরি হওয়া গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘাটতি হলো, যোগাযোগ দক্ষতা ও ভালো ইংরেজি না জানা। পরিকল্পনামন্ত্রীও বলেছেন, সিপিডির কর্মীরা মাঠপর্যায়ে ঘুরে ঘুরে এ গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। এ গবেষণার ফলাফল আমাদের ধারণার সঙ্গে মোটামুটি মেলে।

সিপিডি গবেষণার সঙ্গে আমরাও একমত। এটি সত্য যে, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কর্মোপযোগী স্নাতক দিতে পারছে না। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই চাকরির বাজার-উপযোগী গ্র্যাজুয়েট গড়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছে।

প্রতিবছর কমবেশি ২০ লাখ মানুষ শ্রমশক্তিতে যোগ হচ্ছে। সেই তুলনায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে একেবারেই অপ্রতুল। দেশের সমুদয় জনসংখ্যাকে চাকরি বাজারের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলতে হবে। শুধু একটা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে হবে না, বিশ্ব শ্রমবাজারে টিকে থাকার জন্য দক্ষ লোক তৈরি করতে হবে।

সরকার জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন করেছে, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) গঠন করেছে। এনএসডিএতে নিবন্ধিত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কম নয়, ১৪৩টি। এসব প্রতিষ্ঠানে সনদসর্বস্ব শিক্ষা নয়, কর্মক্ষেত্রে ব্যবহারোপযোগী শিক্ষাদান নিশ্চিত করতে হবে।

কর্মক্ষম যুবশক্তিকে কাজে লাগাতে দেশের চাকরির বাজারের চাহিদা কী আছে, অন্যান্য দেশে কী চাহিদা আছে, সব চাহিদাগুলো সামনে রেখে সমন্বিত মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিকল্পনা নিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

শিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য উপযুক্ত কাজ সৃষ্টি এবং সেই কাজের উপযোগী মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। প্রবাসেও প্রতি বছর বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। প্রতি বছর কী পরিমাণ লোক বিদেশে কাজ করতে যান, সে তথ্য সরকারের কাছে আছে; কিন্তু প্রতিবছর কত লোক ফিরে আসেন, সে তথ্য নেই। বিদেশে প্রকৃত কর্মসংস্থানের হিসাবের হালনাগাদ তথ্য রাখা গেলে প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী পাঠানো সহজতর হবে।

চাকরিদাতারা খুঁজছেন দক্ষ ও যোগ্য প্রার্থী। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে পদভেদে হাজার হাজার, এমনকি লাখো আবেদন পড়ে। স্নাতকোত্তর-উত্তীর্ণ কোনো কোনো বেকার পিয়ন-অফিস সহায়ক পদের চাকরির জন্য আবেদন করেন। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে তাদের বিভিন্ন শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এ লক্ষ্যে উচ্চশিক্ষা পাঠক্রমেও পরিবর্তন আনা জরুরি। টেকসই উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একই সঙ্গে শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত দক্ষ কর্মী। শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই চাকরির বাজারোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে।