চার দেশে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় ৫৬০ কোটি ডলার প্রয়োজন জাতিসংঘের

 

শেয়ার বিজ ডেস্ক: চারটি দেশে দুর্ভিক্ষের বিপর্যয় ঠেকাতে চলতি বছরের জন্য ৫৬০ কোটি মার্কিন ডলারের সাহায্য চেয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দফতরে তিনি গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এ জরুরি অর্থ সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। খবর বিবিসি।

তিনি বলেছেন, ‘আমরা সবচেয়ে বড় যে বাধার সামনে আছি, তা হলো তহবিল। দক্ষিণ সুদান, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া ও ইয়েমেনÑএ চারটি দেশে এখন মানবিক সাহায্য দিতে গেলে এ বছর প্রয়োজন ৫৬০ কোটি ডলারের চেয়েও বেশি। এ বিপর্যয় ঠেকাতে আগামী মার্চের মধ্যেই দরকার অন্তত ৪৪০ কোটি ডলার।’ অনেকের অঙ্গীকার সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৯০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। যা দরকারের মাত্র দুই শতাংশ। “

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘লাখ লাখ মানুষ অনাহার, অপুষ্টিতে মৃত্যুঝুঁকিতে দিনযাপন করছে। যা যে কোনো সময় রোগের বিস্তার ঘটিয়ে মহামারীর আকার ধারণ করতে পারে। তারা খাদ্যের অভাবে নিজেদের পশু এবং আগামী বছরের জন্য জমানো শস্য খাওয়া শুরু করলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে।’

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইতোমধ্যে সিরিয়াসহ বৈশ্বিক শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। এরই মধ্যে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সামনে আসায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

ইউনিসেফের মতে, দুর্ভিক্ষের বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী মাসের মধ্যে এ চারটি দেশে অন্তত কয়েক লাখ শিশুর মৃত্যু হবে খাবারের অভাবে।

দক্ষিণ সুদানের কিছু অংশে গত সোমবার দুর্ভিক্ষের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ছয় বছরের মধ্যে এ প্রথম বিশ্বের কোনো অংশে দুর্ভিক্ষের ঘোষণা এলো।

আর এভাবে ঘোষণা না দেওয়া হলেও বহুদিন ধরেই অনাহারের কষ্টে আছে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া ও ইয়েমেনের বহু মানুষ। জাতিসংঘের হিসাবে যে সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। তা নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের কণ্ঠে প্রকাশ পেয়েছে এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, নাইজেরিয়ার কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চল গত বছর থেকেই দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত রয়েছে। আর সোমালিয়ায় যা চলছে ২০০০ সাল থেকে।

জাতিসংঘের খাদ্য তহবিলের হিসাবে ২০১১ সালে সোমালিয়ায় না খেতে পেয়ে মারা গেছে আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ, যাদের অর্ধেকই শিশু।

কেবল সোমালিয়ার দুর্ভিক্ষের কারণ খরা। বাকি দেশগুলোয় সংঘাত আর মানবসৃষ্ট কারণে ঘটছে এমন বিপর্যয়।

নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারামের সঙ্গে চলা সংঘাতে খাদ্য সংকটে অন্তত ৫০ লাখ অধিবাসী আর পাঁচ লাখ শিশু চরম অপুষ্টিতে রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রধানের মতে, অনেক আগে থেকেই তারা বিশেষ করে দক্ষিণ সুদানের বিপর্যয়ের কথা বলে আসছিলেন, কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এতে কোনো সাড়া দেয়নি।

সরকারি ও জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী দক্ষিণ সুদানের প্রায় এক লাখ লোক ক্ষুধাকষ্টে ভুগছে। আরও ১০ লাখ লোক দুর্ভিক্ষের শিকার হওয়ার মুখে। গৃহযুদ্ধ ও অর্থনৈতিক ধসকে এ দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ী করা হচ্ছে।

আপাতত দক্ষিণ সুদানের ইউনিটি স্টেটে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, জরুরি সহায়তা না পাওয়া গেলে এ সংকট আরও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়বে।

জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ও ইউনিসেফের মতো সহায়তাকারী এজেন্সিগুলো বলছে, দক্ষিণ সুদানের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষের (৪০ লাখ ৯০ হাজার) জরুরি খাবার দরকার।

দুর্ভিক্ষ কখন ঘোষণা করা হয়

খাদ্য সংকটের কারণে পুষ্টিহীনতার শিকার হতে পারে অগণিত মানুষ। কিন্তু শুধু এ পর্যায়কে দুর্ভিক্ষ বলা যাবে না। দীর্ঘদিনের খরা ও অন্য সমস্যার কারণে খাদ্য সরবরাহ কম হয় বটে, তাই বলে এ পরিণতিকে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা যাবে না।

জাতিসংঘের প্রণীত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দুর্ভিক্ষ তখনই ঘোষণা করা হবে যখন নির্দিষ্ট মাত্রায় মৃত্যুহার, অপুষ্টি ও ক্ষুধার সম্মিলন হবে, কোনো একটি এলাকার অন্তত ২০ শতাংশ পরিবার চরম খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হলে, এমনকি অল্প পরিমাণ খাবারও যাদের নেই।

যখন অপুষ্টির হার ৩০ শতাংশেরও বেশি হয়। প্রতিদিন ১০ হাজারে মৃত্যুহার যখন দুজনের বেশি হয়।

দুর্ভিক্ষের ঘোষণা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘ কিংবা সদস্য রাষ্ট্রের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সমস্যার সমাধানে শুধু বিশ্বের নজর কাড়তেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।