Print Date & Time : 27 July 2025 Sunday 4:26 am

চার বছরেও আলোর মুখ দেখেনি আইন সংশোধন

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দীর্ঘ চার বছরেও আলোর মুখ দেখেনি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডের রি-ইনভেস্টমেন্ট আইন সংশোধন। চার বছর আগে লভ্যাংশ হিসেবে রি-ইনভেস্টমেন্ট বন্ধ করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিলে তা আজও কার্যকর হয়নি। ওই সময় ফান্ডগুলোর রি-ইনভেস্টমেন্ট বন্ধ করতে আইনের সংশোধন খসড়া প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত হয়। তারপর অজানা কারণেই এর অগ্রগতি থেমে যায়।
প্রস্তাবিত সংশোধন খসড়ায় বলা হয়, কোনো মিউচুয়াল ফান্ড থেকে বিনিয়োগকারীদের কখন লভ্যাংশ হিসেবে রি-ইনভেস্টমেন্ট বা পুনর্বিনিয়োগ দিতে পারবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। সংশোধনী খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটপ্রতি সম্পদমূল্য ওই ফান্ডের বাজারদরের তুলনায় কম হলে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি লভ্যাংশ আকারে রি-ইনভেস্টমেন্টের প্রস্তাব করতে পারবে না। তাছাড়া লভ্যাংশ আকারে রি-ইনভেস্টমেন্ট অনুমোদন হলেও বিনিয়োগকারীকে নগদ বা রি-ইনভেস্টমেন্ট, এ উভয় পদ্ধতির মধ্যে যে কোনো একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
গত কয়েক বছর একাধিক সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি রি-ইনভেস্টমেন্ট আকারে ইউনিট হোল্ডারদের লভ্যাংশ দিচ্ছে। এতে ইউনিট হোল্ডারদের অন্তত ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। জেনে-বুঝেই সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এমন লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছিল। ফান্ডগুলো ট্রাস্টি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা না করে ওই লভ্যাংশ অনুমোদন করে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার প্রেক্ষাপটে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ-সংক্রান্ত আইনের ধারায় সংশোধন আনার উদ্যোগ নেয়।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গড়িমসির কারণেই বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। একটি পক্ষকে সুযোগ করে দিতেই এমনটি করা হচ্ছে। কবে নাগাদ বিষয়টি আলোর মুখ দেখবে, তা বলতে পারছেন না বিএসইসির কর্তাব্যক্তিরা।
সূত্রে জানা যায়, মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনাকারী একাধিক সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি চায় না যে, আইনের প্রস্তাবিত সংশোধন চূড়ান্ত হোক। মূলত সে কারণেই আইন সংশোধের বিষয়টি ঝুলে আছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, তারা রি-ইনভেস্টমেন্ট চান না।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, একই দিনে আইপিও আইনে (পাবলিক ইস্যু রুলস) সংশোধন খসড়া অনুমোদনের পর জনমত যাচাই শেষে তা চূড়ান্ত ও কার্যকর করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এর মধ্যে আইপিও আইন সংশোধন হয়ে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। অথচ এ দীর্ঘ সময়েও আলোর মুখ দেখেনি মিউচুয়াল ফান্ডের আইন সংশোধন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি অনেক দিন ধরে ঝুলে রয়েছে। ঠিক কী কারণে এমন হচ্ছে তা জানা নেই। কবে নাগাদ এর অনুমোদন মিলবে তা বলতে পারেননি তিনি।
একই বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, শুধু মিউচুয়াল ফান্ডের কোনো সিদ্ধান্তই নয়, পুঁজিবাজারে যে কোনো সিদ্ধান্তই বিনিয়োগকারীদের কথা চিন্তা করে করা উচিত। কারণ যারা বর্তমানে পুঁজিবাজারের সঙ্গে রয়েছেন তাদের বেশিরভাগই ক্ষতিগ্রস্ত।
খসড়ায় বলা হয়েছে, ফান্ড ব্যবস্থাপকদের ফি নতুন করে নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া ফান্ডগুলো লভ্যাংশ ঘোষণায় ব্যর্থ হলেও ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমিশন ইচ্ছা করলেই কমিয়ে দিতে পারবে।
জানা যায়, নতুন সংশোধন খসড়ায় মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বমোট মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর রাখার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বর্তমানে এ নীতি কমিশনের একটি নির্দেশনা অনুসারে কার্যকর রয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, চাইলে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডকে বেমেয়াদিতে রূপান্তরের সুযোগ বহাল থাকবে। এছাড়া মেয়াদি ফান্ডের মতো বেমেয়াদি ফান্ড স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। এক্ষেত্রে এ ধরনের ফান্ডের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের ব্যবধান তিন থেকে পাঁচ শতাংশ সীমাবদ্ধ রাখা নিশ্চিত করা হবে। বিনিয়োগের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রতি মাসে সব ধরনের মিউচুয়াল ফান্ডের মাসিক ভিত্তিতে পোর্টফোলিও প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হবে।
এদিকে আইনটি চূড়ান্ত না হওয়ায় গত বছরও কিছু ফান্ড ঠিকই কাজটি করে ফেলেছে। আগের মতোই ফান্ডগুলোর রি-ইনভেস্টমেন্ট ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও খসড়ায় বলা ছিল, চূড়ান্ত অনুমোদন না হলেও ফান্ডগুলোকে রি-ইনভেস্টমেন্ট দিতে বিএসইসির অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করেনি ফান্ডগুলো।