শাশা ডেনিমস লিমিটেড

চার বছরের ব্যবধানে রপ্তানি বেড়েছে ৪৬০ কোটি টাকা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশের ডেনিম পণ্য উৎপাদনে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান শাশা ডেনিম চার বছরের ব্যবধানে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে প্রায় দ্বিগুণ ডেনিম পণ্য রপ্তানি করছে। প্রতিষ্ঠানটির গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের মোট বিক্রয় রাজস্ব ছিল ৫৮২ কোটি টাকা। আর গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষে শাশা ডেনিমের মোট বিক্রয় রাজস্ব হয়েছিল এক হাজার ৪২ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে রপ্তানি বেড়েছে ৪৬০ কোটি টাকা। যা শতাংশ হিসেবে প্রায় ১৮০ শতাংশ। এরমধ্যে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রপ্তানিতে শীর্ষ অবস্থান নিশ্চিত করে।

সংশ্লিষ্ট ও শাশা ডেনিম লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, করোনা ও ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের মন্দা প্রভাব কাটিয়ে বাংলাদেশের ডেনিম রপ্তানি আবারও বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) শীর্ষ ডেনিম সরবরাহকারী হওয়ায় বিশ্ববাজারে আরও বেশি রপ্তানির জন্য এই খাতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ইইউয়ে শীর্ষ ডেনিম রপ্তানিকারক দেশ। এই অঞ্চলে প্রতি তিনজনের একজন বাংলাদেশে উৎপাদিত ডেনিম প্যান্ট পরেন। তবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সাড়ে ৬৪ বিলিয়ন ডলারের ডেনিমের বিশ্ববাজারে আধিপত্য বিস্তারে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। বর্তমানে স্থানীয় রপ্তানিকারকরা বিশ্বব্যাপী প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের ডেনিম পণ্য সরবরাহ করছেন। আর ২০২৬ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ডেনিমের বাজার ৭৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি বছরে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ হারে বাড়বে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষে শাশা ডেনিমের মোট বিক্রয় রাজস্ব হয়েছিল এক হাজার ৪২ কোটি টাকা। এরমধ্যে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রপ্তানিতে শীর্ষ অবস্থান নিশ্চিত করে। প্রতিষ্ঠানটির গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের মোট বিক্রি রাজস্ব ছিল ৫৮২ কোটি টাকা।


অর্থাৎ শাশা ডেনিম চার বছরের ব্যবধানে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে প্রায় দ্বিগুণ ডেনিম পণ্য রপ্তানি করছে। রপ্তানি আরও বাড়ানোর জন্য এর মধ্যে কোম্পানির পর্ষদ জিএ গার্মেন্টস লিমিটেডের শেয়ারে বিনিয়োগ করছে। সাভার ইপিজেডে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ লাইনের গার্মেন্টস কারখানার দৈনিক ২৭ হাজার পিস উৎপাদন সক্ষমতা লিড সনদের একটি কারখানা স্থাপনে কাজ করছে। এ কারখানায় ২ হাজার ৩০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এতে বছরের প্রায় ৫০০ কোটি টাকা পোশাক রপ্তানির সম্ভাবনা আছে। আর এ কারখানার ৮৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক হবে শাশা ডেনিম। এছাড়া শাশা ডেনিমসের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে ১০৫টি লুম প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লুমগুলো ঢাকা ইপিজেডের বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) বরাদ্দকৃত ২৮৯ থেকে ২৯২ নম্বর প্লটে স্থাপন করা হচ্ছে। এ মেশিনগুলো প্রতিস্থাপন করার পর কোম্পানির বার্ষিক রপ্তানি আনুমানিক ৩৫০ কোটি টাকা বাড়বে। এছাড়া ইএসও টেক্সটাইল মিলের
দুই লাখ ১২ হাজার পিস ওয়াশিং করার মতো একটি প্লান্ট স্থাপন করা হচ্ছে, যা এরমধ্যে স্থাপিত হয়েছে।

এ বিষয়ে শাশা ডেনিমস লিমিটেডের কোম্পানির সচিব আসলাম আহমেদ খান শেয়ার বিজকে বলেন, মন্দা প্রভাব কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউতে বাংলাদেশের ডেনিম রপ্তানি আবারও বেড়েছে। ফলে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আমরা এক হাজার কোটি টাকার রপ্তানির মাইলফলক স্পর্শ করেছি। আমাদের রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত আছে। এছাড়া সাভার ইপিজেডে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ লাইনের গার্মেন্টস কারখানার দৈনিক ২৭ হাজার পিস উৎপাদন সক্ষমতা লিড সনদের একটি কারখানা স্থাপনে কাজ শুরু হয়েছে। এ কারখানায় ২ হাজার ৩০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এতে বছরের প্রায় ৫০০ কোটি টাকা পোশাক রপ্তানির সম্ভাবনা আছে। এছাড়া ঢাকা ইপিজেডের বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) বরাদ্দকৃত ২৮৯ থেকে ২৯২ নম্বর প্লটে ১০৫টি লুম প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে। আর ইএসও টেক্সটাইল মিলের দুই লাখ ১২ হাজার পিস ওয়াশিং করার মতো একটি প্লান্ট স্থাপন করা হচ্ছে। এসব কাজ শেষ হলে আমাদের আয় আরও বাড়বে।

আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শাশা ডেনিমস লিমিটেডের চলতি ২০২৪-২৫ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সমন্বিত মুনাফা বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। আলোচ্য সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ৪০ পয়সা, আগের হিসাববছরের একই প্রান্তিকে যা ছিল ২৭ পয়সা। মুনাফা বাড়ার কারণ হিসেবে কোম্পানিটি জানিয়েছে, আলোচ্য প্রান্তিকে শাশা ডেনিমসের রপ্তানি বেড়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৪১ টাকা ৬৬ পয়সায়। এছাড়া গত ২০২৪ হিসাববছর শেষে কোম্পানিটির সমন্বিত ইপিএস হয়েছে এক টাকা ৭৭ পয়সা, আগের হিসাববছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৪০ পয়সা। আর সমাপ্ত ২০২৩-২৪ হিসাববছরে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি।
উল্লেখ, ২০১৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত শাশা ডেনিমসের অনুমোদিত মূলধন ২২৫ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১৪১ কোটি ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৩০১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৪ কোটি ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৯১০। এর মধ্যে ৪৪ দশমিক ৪০ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে, ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও ৩২ দশমিক ১৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। গতকাল শেয়ারটির সমাপনী দর ছিল ১৭ টাকা ৮০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনি¤œ ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ১৭ টাকা ৫০ ও ২৭ টাকা ৯০ পয়সা।