নিজস্ব প্রতিবেদক: একদিকে ধারাবাহিকভাবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেই চলেছে। অন্যদিকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বাড়ছে সরকারের ঋণ। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর প্রথম চার মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ কমেছে ৪০ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
তথ্যমতে, অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোয় ৩৫ হাজার ৩২৮ কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে। একই সময় পুরোনো সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের ফলে এ খাত থেকে সরকারের নিট ঋণ এসেছে ৯ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ছয় হাজার ৩১৭ কোটি টাকা কম।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এমনিতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সীমা ও বিভিন্ন কড়াকড়ি রয়েছে। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সুদহার কমানো হয়েছে। আবার ঘোষণার বাইরে সঞ্চয়পত্র থাকলে জেল-জরিমানার বিধান করা হয়েছে। এ কারণে অনেকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমিয়েছেন।
একদিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে। অন্যদিকে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, সুদ পরিশোধসহ বিভিন্ন কাজে ব্যয় বেড়েছে। ফলে রাজস্ব আয় ও বিদেশি অর্থছাড় বাড়লেও ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকারের নিট ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য রয়েছে। সেই হিসাবে প্রথম চার মাসে অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ ঋণ নিয়েছে সরকার।
বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময় (জুলাই-জুন) সঞ্চয়পত্র থেকে ৪১ হাজার ৯৫৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা নিট ঋণ নেয় সরকার, যেখানে গত অর্থবছরে মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের শেষ দিকে এ খাতের ঋণ বেড়ে যাওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা করা হয়।
ওই অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার অনেক বেশি ঋণ আসায় চলতি অর্থবছরে এ খাতের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। তবে সম্প্রতি সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগের অঙ্কের ওপর ভিত্তি করে সরকার মুনাফার হার পুনর্নির্ধারণ করায় এ খাতের বিনিয়োগ আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা।
এ মুহূর্তে ঘাটতি মেটাতে সরকার আবার ব্যাংকঋণে ঝুঁকছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে। অথচ গত অর্থবছরের একই সময় সরকারের কোনো ব্যাংকঋণ ছিল না। ওই সময় ঋণ নেয়ার চেয়ে পরিশোধের পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বেশি ছিল।
একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি খাতে ঋণ চাহিদা বাড়ার বিষয়টি আপাতত সুবিধাজনক বলে মনে হলেও দীর্ঘ মেয়াদে চাপ তৈরি করবে। কেননা বর্তমানে ঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক নয়। ফলে চাহিদা বাড়লেও কোনো ব্যাংকঋণে ৯ শতাংশের বেশি সুদ নেয়া যাবে না। অথচ বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে উচ্চ সুদে আমানত নিতে হবে। এতে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনায় চাপ তৈরি হবে।