প্রতিনিধি, পঞ্চগড়: আনন্দঘন পরিবেশে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা সোয়া ১১টায় পঞ্চগড় সরকারি অডিটোরিয়াম চত্বরে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে নিলাম কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন।
দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে সমতলে চা চাষ করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে এগিয়ে থাকা পঞ্চগড়বাসী নতুন এই নিলাম কেন্দ্র পেয়ে আনন্দিত। তারা ‘সমতলে চায়ের ভুবনÑপঞ্চগড়ে স্বাগতম’ সেøাগানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে অতিথিদের স্বাগত জানান।
পরে অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি ছিলেন রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন, পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মজহারুল হক প্রধান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান, পঞ্চগড়ের সাবেক ডিসি মুহাম্মদ রবিউল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন ডিসি জহুরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেনÑজেলা পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান শেখ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট।
পঞ্চগড়ে ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সরকার। অবশেষে সেই বহুল কাক্সিক্ষত চা নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ায় আশার আলো দেখছেন উত্তরাঞ্চলের সমতলের চা চাষিরা। চা নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ায় চাষিরা তাদের উৎপাদিত চা পাতার ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে মনে করছেন। দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটের জাঁতাকলে তারা চা পাতার দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করে আসছেন। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে এ অঞ্চলে চা নিলাম কেন্দ্র চালুর দাবি জানিয়ে এসেছিলেন চা সংশ্লিষ্টরা।
চায়ের নিলাম কেন্দ্র ঘিরে চা শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে। গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ব্রোকার ও ওয়্যার হাউস। এরই মধ্যে ১০টি ব্রোকার হাউসের মধ্যে পাঁচটিকে এবং আটটি ওয়্যার হাউসের মধ্যে দুটিকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনলাইন অ্যাপ তৈরিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে।
চা সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের এই তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র চালুর মধ্য দিয়ে উত্তরাঞ্চলের চা শিল্পের আরও উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনীতির সমৃদ্ধি ঘটবে। দীর্ঘদিন ধরে সমতলের চা চাষিদের মধ্যে তাদের উৎপাদিত চা পাতার দাম না পাওয়ায় যে হতাশা তৈরি হয়েছে তার নিরসন ঘটবে। পাশাপাশি চায়ের পরিবহন খরচ কমে যাবে। হবে নতুন কর্মসংস্থান। ক্ষুদ্র চা চাষিরা নিলাম কেন্দ্রে চায়ের উš§ুক্ত কেনাবেচায় চায়ের কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্যও পাবেন। এতে গোটা উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন হবে বলে মনে করছেন তারা।
গত দুই দশকে এ জেলার প্রায় ১২ হাজার ৭৯ একর জমিতে গড়ে ওঠে ছোট-বড় আট হাজারের বেশি চা বাগান। পঞ্চগড়ের ২৪টি কারখানায় চলতি অর্থবছরে (২০২৩ ও ২০২৪) দুই কোটি কেজি চা উৎপাদনের আশা করছে চা বোর্ড। তবে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৮০ লাখ ২৮ হাজার ৮৫০ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে।
চাষিরা বলছেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে পঞ্চগড়ে চায়ের নিলাম বাজার চালু করার লক্ষ্যে দাবি জানিয়ে আসছি। কারণ আমরা একটি সিন্ডিকেটের কারণে চা পাতার উপযুক্ত দাম পাচ্ছি না। নিলাম বাজারে চা কারখানা মালিকরা যেন উন্নত মানের চা তোলেন। কেননা কারখানায় উৎপাদিত উন্নত মানের চা কর ফাঁকি দিয়ে বিক্রি করে নি¤œমানের চা নিলামে তোলায় চাষিরা প্রকৃত দর পাওয়া থেকে এত দিন বঞ্চিত ছিলেন। আশা করছি এ নিলাম কেন্দ্র চালুর মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের উৎপাদিত চা পাতার দাম পাব।