চালের আমদানি শুল্ক হ্রাস ও রেগুলেটরি ডিউটি অব্যাহতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: চালের দাম বেড়েই চলেছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানিতে শুল্ককর ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে। এছাড়া রেগুলেটরি ডিউটি অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। শর্তসাপেক্ষে এই শুল্ক কমানো ও রেগুলেটরি ডিউটি অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। চালের সরবরাহ বাড়ানো ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানি কমাতে সম্প্রতি এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুল্ক কমানো ও রেগুলেটরি ডিউটি অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত আমদানিকারকরা ১৫ শতাংশ শুল্কে সেদ্ধ ও আতপ চাল আমদানি করতে পারবেন। আমদানির আগে প্রতিটি চালানের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মনোনীত যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার কাছ থেকে লিখিত অনুমোদন নিতে হবে। বাসমতি কিংবা সুগন্ধিযুক্ত চাল আমদানি পূর্বনির্ধারিত অর্থাৎ ২৫ শতাংশ শুল্কেই আমদানি করতে হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে চলতি বছর শেষে আমন ওঠার আগ পর্যন্ত বাজার স্থিতিশীল রাখতে চাল আমদানি করতে চায় সরকার। গতকাল এক অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘ভোক্তা ও কৃষকের স্বার্থরক্ষার জন্য সরকার চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি বেসরকারিভাবে চাল আমদানির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’

সূত্রমতে, চলতি বছর দেশে বোরো ও আমনের বাম্পার ফলনের পরও চালের দাম বাড়তে থাকে অস্বাভাবিকহারে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেসরকারি খাতে আমদানির সুযোগ উম্মুক্ত করে সরকার। গত ২৭ ডিসেম্বর বেসরকারিভাবে চালের আমদানি শুল্ক আগের ৬২ দশমিক পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার। এতে বেসরকারিভাবে চাল আমদানিতে শুল্ক কমানো হয় ৩৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ। আমদানি শুল্ক কমানোর পর চাল আনার হিড়িক পড়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। বেসরকারিভাবে ১০ লাখ টন চাল আনার টার্গেট থাকলেও এ পর্যন্ত দেশে চাল প্রবেশ করেছে দুই থেকে আড়াই লাখ টনের মতো। ফলে চালের দাম কমেনি কাক্সিক্ষত হারে। বরং দিন দিন বাড়ছে চালের দাম। রাজধানীতে গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম বেড়েছে। যে চালের দাম ছিল ৬৪ টাকা কেজি, বর্তমানে সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকায়। গত সপ্তাহের তুলনায় চিকন চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই টাকা। এ ছাড়া গত সপ্তাহে যে চালের দাম ছিল ৫৮ টাকা কেজি, রোববার সেই চাল বিক্রি হয় ৬০ টাকা কেজিতে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হলে তবেই চালের দাম কমবে।

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবে গত বছর এ সময় যে চাল ৫০ টাকা কেজিতে পাওয়া যেত, এখন সেই চালের কেজি ৬০ টাকা। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে চিকন চালের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোটা চালের দাম এখন ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি। মাঝারি ধরনের চালের দাম ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি এবং চিকন চালের দাম প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকারি গুদামে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় লাখ ৪৭ হাজার ১০ টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। এর মধ্যে চাল পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ৫৯ টন ও গম এক লাখ আট হাজার টন। গত বছর এই সময় মজুত ছিল ১৮ লাখ ২৭ হাজার ৯৮ টন। এর মধ্যে চাল ১৪ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮ টন এবং গম তিন লাখ ৬১ হাজার টন। অর্থাৎ চালের মজুতের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ কম।