Print Date & Time : 4 July 2025 Friday 11:02 pm

চাল আমদানিতে শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার চায় ট্যারিফ কমিশন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: শুল্ক কমানোর পরও চাল আমদানিতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ নেই। ফলে বাজারে চালের দামও কমেনি। এ পরিস্থিতিতে আমদানি বাড়াতে শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। কমিশন থেকে গতকাল মঙ্গলবার এ-সংক্রান্ত চিঠি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দেয়া হয়েছে। তবে আমদানিকারকরা বলছেন, সম্প্রতি বন্যায় ধানের ফলন বেশ ব্যাহত হয়েছে। ফলে চালের দর কিছুটা বাড়তি। এ পরিস্থিতিতে শুল্ককর প্রত্যাহারের উদ্যোগটি অবশ্যই সরকারের ভালো উদ্যোগ। তবে তারপরও আমদানি হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ বিশ্ববাজারে এখন চালের দর বেশি। দেশীয় চাল বাজারে আসতে সপ্তাহ দুয়েক লাগবে। তখন দাম কমতে শুরু করবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চিঠিতে চালের বর্তমান বিশ্ব ও স্থানীয় বাজার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। এতে কমিশন বলেছে, সাম্প্রতিক বন্যায় চালের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় স্থানীয় বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি, মূল্য স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে সুনির্দিষ্ট মেয়াদে চাল আমদানিতে শুল্ককর সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা যেতে পারে।
ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি বছরের শুরু থেকেই চালের বাজার বাড়তি ছিল। ছাত্র আন্দোলনের সময় তা আরও ফুলেফেঁপে ওঠে। এরপর দাম আর কমেনি। গতকাল ঢাকার খুচরা বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে মাঝারি আকারের তথা বিআর-২৮ ও পায়জাম জাতের চালের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৮ থেকে ৬৩ টাকায়। মোটা চালের (গুটি স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকায়। এছাড়া চিকন চাল (মিনিকেট) বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭২ থেকে ৮০ টাকা দরে। দুই-আড়াই মাস আগে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০, মাঝারি চাল ৫৪ থেকে ৫৮ এবং চিকন চাল ৬৮ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, গত এক মাসে মোটা চালের দর বেড়েছে প্রায় ২ শতাংশ। এছাড়া চিকন ও মাঝারি চালের দর বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। তবে এক বছরের ব্যবধানে এই হার হারও বেশি। এ সময় সব ধরনের চালের দর বেড়েছে গড়ে ১২ শতাংশ। বর্তমানে চাল আমদানি পর্যায়ে ২৫ শতাংশ শুল্ককর রয়েছে।
এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাজারে চালের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে মাসখানেক আগে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে চাল আমদানিতে মোট শুল্ককর ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়ে ৫ শতাংশ করার অনুরোধ হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ট্যারিফ কমিশন প্রস্তাব দিলে গত ২০ অক্টোবর এনবিআর বিভিন্ন পর্যায়ে মোট ৩৫ শতাংশ শুল্কছাড় দেয়। তখন এনবিআর হিসাব করে জানায়, শুল্কছাড়ের ফলে প্রতি কেজি চাল আমদানিতে খরচ কমবে ১৪ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু শুল্কছাড়ের এক সপ্তাহের বেশি সময় পার হলেও ব্যবসায়ীদের চাল আমদানিতে আগ্রহ নেই।
তাদের ভাষ্য, ভারত থেকে সেদ্ধ চাল আমদানি করলে প্রতি কেজিতে খরচ পড়বে ৬৫-৬৬ টাকা। থাইল্যান্ড থেকে আনলে খরচ পড়বে ৭৫ টাকার মতো। এর সঙ্গে পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ যোগ করলে তা স্থানীয় বাজারের চালের দামকে ছাড়িয়ে যাবে। ফলে তারা আমদানি করছে না। তবে সরকারিভাবে মাত্র ২৬ টন চাল আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে দেখা গেছে, এখন বিশ্ববাজারে চালের দর কিছুটা বেশি। সংস্থাটির হিসাবে, ভারত থেকে চাল আনলে প্রতি কেজির দর পড়বে ৫৪ টাকার মতো। এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক খরচ ও মুনাফা যোগ হবে। আর থাইল্যান্ড থেকে আনলে প্রতি কেজির দর পড়বে ৬৬ টাকা। এর সঙ্গে অন্য খরচ ও মুনাফা তো আছেই।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য দিয়ে ট্যারিপ কমিশন বলছে, বন্যায় গত দুই মাসে ৮ লাখ ৩৯ হাজার টন চালের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। দাম নাগালে রাখতে করভার সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা যেতে পারে।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত চাল আমদানি হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৯৫৭ টন চাল। এর মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় ৫ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি নিয়েছে। এছাড়া ৭ লাখ টন গম আমদানিরও প্রক্রিয়া চলমান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো-মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, শুল্ক পুরোপুরি কমালেও আমদানি হবে বলে মনে হয় না। কারণ বিশ্ববাজারে এখন চালের দর অনেক বেশি। ভারত থেকে আমদানি করলে মোট চালের দর পড়বে ৫৮-৬২ টাকা। তবে ১৫-২০ দিনের মধ্যে নতুন ধান এলে চালের দাম কমে যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে বছরে চালের চাহিদা ৩ কোটি ৭০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৯০ লাখ টন। তবে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৪ কোটি ২০ লাখ টনের মতো; যা চাহিদার চেয়েও বেশি।
চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশ হওয়ার পরও দাম বাড়ছে কেনÑজানতে চাইলে আব্দুর রশিদ বলেন, উৎপাদন ও চাহিদা পরিসংখ্যান ভালোভাবে হিসাব করা দরকার। পাশাপাশি খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে সরকারকে তদারকি জোরদার করার পরামর্শ দেন তিনি।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, চিঠি পাওয়ার পর শুল্ককর প্রত্যাহার করা যায় কি নাÑবিষয়টি এনবিআর পর্যালোচনা করবে।