চাহিদা ও আয়ের উল্লম্ফনে বাটা সু’র মুনাফা দ্বিগুণ

মো. রাহাতুল ইসলাম : দেশের জুতাশিল্পে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান বাটা সু বাংলাদেশ চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে কর-পরবর্তী মুনাফায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। কোম্পানির প্রকাশিত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে তাদের মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ‘জানুয়ারি-মার্চ ২০২৫’ সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এই সময়ে বাটার মোট আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা, যেখানে গত বছর একই সময়ে আয় ছিল ২৮০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে আয় বেড়েছে ২৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা টাকায় হিসাব করলে ৭৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

বিশ্লেষকদের মতে, বাটার পণ্যের চাহিদা ও বিক্রির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ায় কোম্পানিটি এ মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। তবে আয়ের পাশাপাশি কোম্পানিটির ব্যয় খাতেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাটার পণ্য উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে ১৯৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, যা গত বছর ছিল ১৫৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ২৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ বা ৩৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

এছাড়া কোম্পানির অপারেটিং এক্সপেন্সেস (পরিচালনামূলক খরচ) বেড়ে হয়েছে ১০৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি। কর বাবদ কোম্পানিটি দিয়েছে ১৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ৬৪ দশমিক ৭১ শতাংশ বা ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বেশি।

এসব খরচ সত্ত্বেও কোম্পানিটি প্রথম প্রান্তিকে দ্বিগুণেরও বেশি মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে। এটিকে কোম্পানিটির সাশ্রয়ী পরিচালনা, চাহিদানির্ভর উৎপাদন ও কার্যকর বিক্রয় কৌশলের পরিচায়ক বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, গতকাল বাটার প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮২৬ টাকা ৬০ পয়সা দরে। সারাদিনে শেয়ারদরের ওঠানামা ছিল ৮২২ টাকা থেকে ৮৫২ টাকা পর্যন্ত। মোট ১ কোটি ৩৬ লাখ ৮০ হাজার শেয়ার ৩৩২ বার হাতবদল হয়েছে, যার বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৫৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাববছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাটা তাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ঘোষণা করেছে ১০৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ। ওই সময় কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ২১ টাকা ৬২ পয়সা, শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ২২০ টাকা ২২ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ ছিল ৭১ টাকা ৪২ পয়সা।

অন্যদিকে এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালে কোম্পানিটি দিয়েছিল ৪৩৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ, শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ২৯ টাকা ৩১ পয়সা এবং এনএভিপিএস ছিল ২৩৭ টাকা ৯৩ পয়সা।

বাটা সু ১৯৮৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় এবং বর্তমানে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে রয়েছে। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২০ কোটি টাকা, পরিশোধিত মূলধন ১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং রিজার্ভ রয়েছে ৩১১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
ডিএসইর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানির মোট ১ কোটি ৩৬ লাখ ৮০ হাজার শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৭০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ১ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ শেয়ার।