চাহিদা কমায় স্ক্র্যাপের দাম টনে কমেছে ১৭ হাজার টাকা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: আন্তর্জাতিক বাজারে পুরোনো জাহাজের দাম কমেছে। তার চেয়ে বেশি কমেছে দেশের বাজারের স্ক্র্যাপের দাম। মূলত রি-রোলিং মিলে স্ক্র্যাপের চাহিদা না থাকায় টনপ্রতি ১৭ হাজার টাকা কমেছে। এক মাস আগে প্রতি টন স্ক্র্যাপের দাম ছিল ৭২ হাজার টাকা; এখন সেই স্ক্র্যাপের দাম ৫৫ হাজার টাকা। লোকসান এড়াতে অনেক ইয়ার্ডে স্ক্র্যাপ বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে রি রোলিং মিলগুলো কাঁচামাল সংকটে পড়তে পারে।

সূত্র জানায়, সীতাকুণ্ডের সমুদ্র উপকূলে গড়ে ওঠা শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে পুরোনো জাহাজ এনে ভেঙে স্ক্র্যাপ বিক্রি করা হয়; যা দেশের রি রোলিং এবং স্টিল মিলগুলো কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে। এক সময় ১৩০টিরও বেশি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড থাকলে বর্তমানে ৩০টির মতো ইয়ার্ড চালু রয়েছে। কিছুদিন ধরে দেশের রি-রোলিং মিলগুলোয় চাহিদা না থাকায় দাম কমে যাচ্ছিল। ফলে ইয়ার্ড মালিকরা বাজারে দাম কমিয়ে সেল দেয়া শুরু করে। এতে বাজারের এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দেয়।

কয়েকজন জাহাজ ভাঙা ব্যবসায়ী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু কমলেও দেশে স্ক্র্যাপের দাম ব্যাপকভাবে কমে যায়। চলতি সপ্তাহে শিপ ব্রেকিং ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) জরুরি বৈঠক করে অলিখিতভাবে স্ক্র্যাপ বিক্রি বন্ধ করে দেয়। সংগঠনটির বলছে, বর্তমান দরে লোহা বিক্রি করতে হলে একটি মাঝারি জাহাজেও ১০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে। বাধ্য হয়েই তারা স্ক্র্যাপ বিক্রি বন্ধ রাখছে। দাম বাড়লে আবার বিক্রি করা হবে। এদিকে বিক্রি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের পর ইতোমধ্যে টনপ্রতি দুই হাজার টাকা দাম বেড়েছে। তবে যাদের রি-রোলিং মিল আছে তারা নিজেদের স্ক্র্যাপ নিজেরাই কিনছে। অন্যদিকে বিএসবিআরএ’র সিদ্ধান্তকে হঠকারী বলে আখ্যায়িত করে স্টিল স্ক্যাপ বায়ার্স অ্যাসোসিয়েশন। এ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনির হোসেন বলেন, পূর্বঘোষণা ব্যতীত সব কয়টি ইয়ার্ডে মালামাল বিক্রি এবং সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্ক্র্যাপনির্ভর রি-রোলিং মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে স্টিল খাতের দুই লক্ষাধিক শ্রমিক মারাত্মক সংকটে পড়ছে।

এ বিষয়ে জাহাজ ভাঙা ব্যবসায় একাধিক ইয়ার্ড ও রি-রোলিং মিল আছে এমন শিল্পগোষ্ঠী মোস্তফা হাকিম গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ সরওয়ার আলম শেয়ার বিজকে বলেন, রডের দাম এক লাখ টাকা হওয়ায় ভোক্তা পর্যায়ে ইস্পাতের চাহিদা কমে যায়। এতে দেশের ইস্পাত মিলগুলোয় স্ক্র্যাপের চাহিদাও কমে যায়। ফলে পুরোনো জাহাজের স্ক্র্যাপের চাহিদা না থাকায় ইয়ার্ড মালিকরা আতঙ্কিত হয়ে স্ক্র্যাপের দাম কমিয়ে বিক্রি করে। তিন মাস আগে পুরোনো জাহাজের টনপ্রতি দাম ছিল ৪১০ থেকে ৪৪০ ডলার; যা এখন ৪৪০ থেকে ৪৭০ ডলার। এতে বাজারের এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দেয়। এ কারণে দাম কমেছে। তিনি আরও বলেন, নিয়মিত ডলারের বিনিময় হারও বাড়ছে। আর ইস্পাতের সব উপকরণ তো আমদানি করতে হয়। আর নির্মাণ মৌসুম শুরু হলে দাম আবার বাড়বে। তবে টনপ্রতি ইস্পাতের দাম ১০ হাজার টাকা কমেছে।