নিজস্ব প্রতিবেদক: দুই বছর ধরে দেশে ধানের ফলন হয়েছে ভালো। আর গত অর্থবছর চালের রেকর্ড উৎপাদন হয়। এতে চলতি অর্থবছর কোনো চাল আমদানি করতে হয়নি। উল্টো সরকারিভাবে একাধিকবার চাল রপ্তানির চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও নানা জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি। তবে দেশে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও আগামী অর্থবছর চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
আগামী (২০২০-২১) অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে এমন তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছর সরকারিভাবে চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ মেট্রিক টন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো চাল আমদানি হয়নি। তাই সংশোধিত বাজেটে মাত্র এক হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির লক্ষ্য ধরা হয়েছে। যদিও বাস্তবে তা আমদানি হবে না।
এরপরও আগামী অর্থবছরের জন্য বিদেশ থেকে এক লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১৪ কোটি টাকা। এদিকে আগামী অর্থবছর আমদানির পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।
সূত্রমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। তবে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় তা কিছুটা কমিয়ে ২০ লাখ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। আর আগামী অর্থবছরের জন্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। এক্ষেত্রে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা।
তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে দুই দফা বন্যার কারণে বোরো ও আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। ওই পরিস্থিতিতে প্রায় ১০ লাখ টনের মতো চাল আমদানি করেছিল সরকার। ফলে ২০১৮-১৯ অর্থবছর সরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি বেড়ে গিয়েছিল। ওই সময় বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছিল। পাশাপাশি এলসি খোলার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। যদিও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় ২০১৮ সালের নভেম্বরে চাল আমদানিতে ২৮ শতাংশ শুল্ক পুনর্বহাল করে সরকার। এতে চাল আমদানি কমলেও বন্ধ হয়নি।
২০১৮-১৯ অর্থবছর ধানের বাম্পার ফলনের পরও বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি অব্যাহত ছিল। এতে কৃষকরা বঞ্চিত হয়। ফলে ২০১৯ সালের ২২ মে সরকার চাল আমদানিতে শুল্ক আরও বৃদ্ধি করে। এক্ষেত্রে রেগুলেটরি ডিউটি (নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক) ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। আর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ ও অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ বহাল রাখা হয়েছে। ফলে সব ধরনের চাল আমদানিতে ৩৩ শতাংশের জায়গায় শুল্ককর ৫৫ শতাংশ করা হয়েছে।
সূত্রমতে, ২০১৭ সালের বন্যায় ফসলহানির পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল চালের ঘাটতি হবে ১০ লাখ টন। কিন্তু দুই বছরে দেশে প্রায় ৬০ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। এজন্য শুল্ক বসিয়ে চাল আমদানির হ্রাস টেনে ধরে সরকার।
সরকারের কাছে চলতি অর্থবছর (সংশোধিত হিসাবে) চালের মজুদ ছিল ৩৩ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ২০ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন। এতে মজুদ দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন। এ অবস্থায় চলতি অর্থবছর কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে চাল রপ্তানির চেষ্টা করা হয়। যদিও সে উদ্যোগ সফল হয়নি।
এদিকে আগামী অর্থবছর চালের মজুদ দাঁড়াবে ৩৮ লাখ ৩৭ হাজার মেট্রিক টন। আর বিতরণ করা হবে ২৪ লাখ ৪২ হাজার মেট্রিক টন। এতে মজুদ থাকবে ১৩ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন। বেসরকারি মজুদ মিলিয়ে তা ৩০ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে কেন চাল আমদানি করা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।
তথ্যমতে, চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও আগামী অর্থবছরের জন্য গম আমদানির লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমানো হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন গম সরকারিভাবে আমদানির প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও চলতি অর্থবছরের গমের সংশোধিত আমদানি লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে চার লাখ ১৩ হাজার টন। এছাড়া গমের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও কমানো হয়েছে। আগামী অর্থবছর অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে গম সংগ্রহ করা হবে ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছর অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে গমের সংগ্রহের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন।