Print Date & Time : 6 September 2025 Saturday 5:04 pm

চা শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি পূরণে গুরুত্ব দিন

চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করায় আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে। আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে টানা ১২ দিনের আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। তথ্যমতে, এ সিদ্ধান্ত প্রতিটি চা বাগানে নেতাদের মাধ্যমে তৃণমূল শ্রমিকদের কাছে যাবে। এরপর শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন। দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন দেশের ২৪১টি চা বাগানের প্রায় সোয়া লাখ শ্রমিক।

আন্দোলনের পরিসমাপ্তি হয়েছে দাবি করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এ দাবি সত্য নয়। গতকালও সিলেটে বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে চা শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। গতকাল রোববার বেলা ১১টা থেকে সিলেট ভ্যালির চা শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে ফের আন্দোলন শুরু করেন। এ শ্রমিকদের দাবি, চা বাগান মালিকরা তাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন। ১২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করে ‘দয়া’ দেখাচ্ছেন তারা। কিন্তু তারা কারও দয়া চান না। তারা বলছেন, বর্তমান সময়ে কোথাও এ মজুরি নেই। যেখানে শ্রমিকের অধিকার বাস্তবায়ন হয়নি, সেখানে প্রত্যাহার নয়, প্রত্যাখ্যান হওয়া জরুরি। শ্রমিকেদের ধারণা, কিছু নেতাকে বশে এনে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা এক ধরনের প্রতারণা। আমরা ১৪৫ টাকা মজুরি নয়, ৩০০ টাকা মজুরির বাস্তবায়ন চাই।

কর্মবিরতি প্রত্যাহার বা প্রত্যাহার না করার পাল্টাপাল্টি অবস্থান দেখে প্রতীয়মান হয়, সমাধান ছাড়াই একতরফাভাবে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এতে শ্রমিকদের ন্যূনতম দাবিও পূরণ করা হয়নি। অন্য খাতের শ্রমিকরাও দৈনিক ১৪৫ টাকা মজুরিতে অপ্রতুল বলে মনে করছেন।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশীয় চা সংসদের আইন অনুযায়ী, শ্রমিকদের বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, রেশন, পানীয় জলের ব্যবস্থা, বোনাসসহ ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করবে বাগান মালিক। মজুরি বাড়ানোর জন্য দুই বছর অন্তর চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশীয় চা সংসদের মধ্যে সমঝোতা বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে উভয়ের আলোচনায় ঐকমত্যের পর চুক্তি সই হবে। এই চুক্তি অনুযায়ী, পরে দুই বছর শ্রমিকরা বেতন-ভাতাসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা পেয়ে যাবেন। ‘ন্যায্য মজুরি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা খোলাসা করা জরুরি। আর সেসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে, প্রতি বছরই বলা হয় এগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এতেই বোঝা যায়, সুযোগ-সুবিধা আদৌ নিশ্চিত হয় না। আমরা মনে করি, এমন দৃষ্টান্ত ও দৃষ্টিভঙ্গি এক ধরনের প্রতারণা। শ্রমিকরাও বুঝে গেছেন তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। চা শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন, এটি কমবেশি সবাই জানেন। এও আমরা জানি, চা বাগান মালিকরা শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে কত ব্যবস্থাই নেন! কিন্তু আমরা বুঝতে পারি তারা শ্রমিকদের প্রতি দায়িত্বশীল মানবিক নন, তাদের ন্যূনতম মজুরি দেন না; এটি প্রহসনই বটে।  আন্দোলন প্রত্যাহার প্রশ্নে তারা চালাকিও করেছেন ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান দেখানোর কথা বলেছেন’। এর অর্থ হতে পারে আন্দোলন যারা প্রত্যাহার করেননি, তারা ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান দেখান না’। এটি নিরীহ শ্রমিকদের ‘শায়েস্তা’ করার পাঁয়তারাও হতে পারে। কোনো কূটনীতি না করে চা শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি পূরণে  অংশীজনরা এগিয়ে আসবেন বলেই প্রত্যাশা।