শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের চিকিৎসকদের সেবাদানের ব্রত নিয়ে জনগণের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এটি কেবল একটি পেশা নয়, সেবার ব্রত নিয়েই আপনাদের জনগণের পাশে থাকতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটাকে শুধু একটা পেশা হিসেবে নয আপনারা মানুষের সেবা করেন এবং আমি চাই সেবার ব্রত নিয়েই আপনারা মানুষের পাশে থাকবেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে রাজধানীর মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপন ও ১৪তম সমাবর্তন ২০২২-এর প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সূত্র: বাসস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আমাদের চিকিৎসকদের একটা কথা বলব, একজন রোগী যখন একজন ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য যান, সেখানে ওষুধের থেকেও ডাক্তারের দুটো কথা অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে সুস্থ করে তুলতে বা তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করতে পারে। কাজেই এই বিষয়টার দিকেও একটু বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। তিনি বলেন, ডাক্তারের কথাতেই রোগী অর্ধেক ভালো হয়ে যায়, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর আমাদের দেশে গবেষণার একান্ত প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে এ বিষয়ে চিকিৎসকদের মনোনিবেশ করার পরামর্শ দেন। সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের জন্য গবেষণা একান্তভাবে প্রয়োজন, সেদিকে নজর দেয়ার জন্য আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের দেশের আবহাওয়া, জলবায়ু এবং প্রকৃতির সঙ্গে অনেক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সেগুলো থেকে মানুষকে মুক্ত করাও আমাদের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি উদাহারণ দেন, জাতির পিতা সে সময় এই অঞ্চলে মারাত্মক আকারে দেখা দেয়া কলেরা নিরাময়ে আইসিডিডিআর’বি প্রতিষ্ঠা করে সেটাকে একটি উন্নত মানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে যান। তার সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় এসে এর আরও উন্নয়ন করে। ফলে এই অঞ্চল কলেরার প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্তি পেয়েছে। পাশাপাশি পোলিওসহ বিভিন্ন রোগের টিকা দিয়ে শিশুকাল থেকেই মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে।
আমাদের দেশের চিকিৎসকরা মেধাবী বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশের চিকিৎসকরা যদি বিদেশে গিয়ে এত ভালো করতে পারেন, তাহলে দেশে করবেন না কেন? আমাদের চিকিৎসরা দেশে যেন তাদের মেধার যথাযথ বিকাশ ঘটাতে পারেন, সে ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্য যত রকম সহযোগিতা প্রয়োজন আপনারা পাবেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বিসিপিএস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপও দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জাহিদ মালেক বিসিপিএসের সুবর্ণজয়ন্তীর ফেলোশিপ ও স্মারকচিহ্ন গ্রহণ করেন। পরে জাহিদ মালেক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের বিসিপিএস ফেলোদের মধ্যে স্বর্ণপদক ও দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে সম্মানসূচক ফেলোশিপও তুলে দেন।
বিসিপিএস সভাপতি অধ্যাপক কাজী দ্বীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন বিসিপিএসের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক এএইচএম তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী।
কভিডকালে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য চিকিৎসক সমাজকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্যই তার সরকার মৃত্যুর সংখ্যা একটা সীমার মধ্যে রেখে করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। চিকিৎসকদের এই সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে গিয়ে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তিনি তাদের আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি বলেন, তার সরকার খাদ্য-পুষ্টির নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি জনগণকে রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্ত রাখতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি সঠিক রোগ নির্ণয় ও মানুষের মাঝে রোগব্যাধি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের অসংক্রমক রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। আর জানি না কেন ইদানীং ক্যানসার ও কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাবটা বেড়ে গেছে। এসব রোগ থেকে মুক্ত থাকার বিষয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি এবং জ্ঞান দান করা প্রয়োজন। সেটা যেমন আপনারা করতে পারেন, তেমনি এই সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রত্যেক বিভাগেই এই বিষয়ভিত্তিক একটি করে হাসপাতাল তৈরি করব। আর জেলা হাসপাতালগুলোয় কিডনি ডায়ালাইসিস এবং হƒদরোগের চিকিৎসা যাতে হতে পারে, সে পদক্ষেপও আমরা এরই মধ্যে নিয়েছি।
সরকারপ্রধান বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আমি বলতে পারি, আমি কিন্তু মানবতাবোধ নিয়েই এদেশের মানুষকে সেবা করে যাব, আমার মতো করে আমি সেই সেবাই মানুষকে দিয়ে যাচ্ছি। ‘ক্ষমতা তার কাছে একটি সুযোগ’ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে মূল লক্ষ্য জনগণের সেবা করা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভোগবিলাসে গা ভাসিয়ে দেয়া নয়। কাজেই আপনারাও যে যেখানে যে পেশায় থাকেন, আপনারা মানবতাবোধ নিয়ে মানুষের পাশে থাকবেন, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।