সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব থাকবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আজ শনিবার মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা এ রোগের জন্য দায়ী এডিস মশা নিধনে ঢাকার ৯২টি স্থানে কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এরই মধ্যে এক হাজার ৪৬০ জন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এর বাইরে অনেকে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বাসায়ই রয়েছে। শহরাঞ্চলে প্রায় প্রত্যেকেরই পরিচিত কেউ না কেউ আক্রান্ত হয়েছে এ রোগে। ফলে এ রোগের ব্যাপক বিস্তার সম্পর্কে সন্দেহ পোষণের সুযোগ নেই।
গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে এডিস ইজিপ্টি ও এডিস এলবোপিকটাস জাতের মশার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে। এ জাতের মশা স্রোতহীন, স্বচ্ছ ও পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে এবং সেখান থেকেই এর বিস্তার ঘটে। রাস্তাঘাটের চেয়ে ঘরের মধ্যে এ মশা অবস্থান করে বেশি। ফলে ঘরের মধ্যে মশার কামড় খেয়ে রোগাক্রান্ত হওয়ার শঙ্কাও বেশি। এ মশা ভোর ও সন্ধ্যার নরম আলোতে কামড়ায়। সে সময়ে অতিরিক্ত সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বৃষ্টিবাদলে নালা-নর্দমা, ডোবা-পুকুরের মশার লার্ভা নষ্ট হয়ে গেলেও ঘর, বারান্দা কিংবা জানালার কার্নিশের মধ্যে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে জš§ নেওয়া এডিস মশার লার্ভা নষ্ট হতে পারে না। রেফ্রিজারেটর, এসি ও ঘরের মধ্যে থাকা টব প্রভৃতির মধ্যে জমে থাকা পানি এ মশার আদর্শ জš§স্থল। সাধারণত বস্তিতে বাস করা নি¤œবিত্ত মানুষের মধ্যে এ রোগ ছড়ায় না। সেখানে এসিও নেই, ঘরের ভেতর টবে রাখা শৌখিন গাছও নেই। তবে দরিদ্রদের অনেকেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে কাজ করতে যায়। সেখান থেকে তারা এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এ রোগে জ্বর ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে সেরে গেলেও হাড়ের জোড়া ও মাংসপেশির তীব্র ব্যথা সহজে সারতে চায় না। কখনও কখনও এ ব্যথা কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। বাড়ির কর্মক্ষম ব্যক্তি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে কাজে যেতে না পারলে আর্থিক সংকট সৃষ্টির পাশাপাশি দক্ষ কর্মীর অসুস্থতাজনিত অনুপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাসাবাড়ির এডিস মশার বিস্তার প্রতিরোধের পাশাপাশি অফিস ও দোকানপাটেও উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ও অফিসের শোভাবর্ধনের জন্য রাখা টবের গোড়ায় জমে থাকা পানি পরিষ্কার রাখার জন্য তাই রোগের মৌসুমে শ্রম ও অর্থ উভয়ের বিনিয়োগ জরুরি।
চিকুনগুনিয়া রোগে সাধারণত মানুষের মৃত্যু হয় না। এ রোগের আলাদা চিকিৎসাও নেই। তবে কোনোভাবেই এ রোগে বিশেষায়িত ব্যথানাশক (পেইন কিলার) সেবন করা যাবে না, বলছেন চিকিৎসকরা। জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধও চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক গ্রহণ করা উচিত। তবে রোগ নির্ণয় অবশ্যই করানোর প্রয়োজন। কেননা এ মৌসুমে চিকুনগুনিয়া না হয়ে ডেঙ্গুও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ডেঙ্গুর কারণে মৃত্যু হতে পারে রোগীর। মশাবাহিত এসব রোগের ব্যাপারে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। এ মশা ঘরের ভেতরে জন্মে। তাই সিটি করপোরেশনের ওপর নির্ভর না করে নিজেদেরও উদ্যোগী হতে হবে।