চিনির দামে উল্লম্ফনের কারণ উদ্ঘাটন হোক

দেশের বাজারে হঠাৎ চিনির দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম ১০ টাকা বেড়েছে বলে গতকাল শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ৭৫ টাকার খোলা চিনি রোববার খুচরা বাজারে ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর মোড়কজাত চিনিতেও আট থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম হু হু করে বাড়ছে। ফলে দেশের বাজারেও সেই প্রভাব পড়েছে দ্রুত। আগামী সপ্তাহে দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। সরকার যদি দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়, তাহলে ডিউটিতে একটু ছাড় দিলে ভোক্তারা সুবিধা পেতে পারে।

উৎপাদন খরচ বাড়লে দাম বাড়বে, এটি স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের দেশে আগেই দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। আবার ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানো হয়। চিনির দাম স্থিতিশীল রাখতে বাজার তদারকি বাড়াতে হবে। আগে কম দামে কেনা পণ্যও দাম বাড়ার সম্ভাবনা থাকলে বাড়িয়ে দেন তারা। সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইলে শুল্ক কমানোর ‘পরামর্শ’ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ঘুরেফিরে সুবিধা বাগিয়ে নিয়েও দাম কমান না তারা।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি বলছে, এক সপ্তাহ আগে বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ৬৮ থেকে ৭০ টাকা ছিল। এখন তা ৭৭ থেকে ৭৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পণ্যের বাজারদর জানানোই টিসিবির কাজ নয়। কেন দাম বেড়েছে, তা নির্ণয় করে দাম কমাতে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানে পণ্যের আপদকালীন মজুদ গড়ে তোলা এবং প্রয়োজন অনুসারে ভোক্তাদের মধ্যে সাশ্রয়ী দামে বিক্রির ব্যবস্থা করলেই বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য থামাতে বাজার তদারকিই বড় সমাধান।

আমদানিকারকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলের দাম বেড়ে যাওয়ায় চিনির দাম বেড়ে গেছে। আমদানিকারকদের দাবি সত্য হলে চিনির দাম বাড়বে। কিন্তু দাম বাড়ানো কতটা যৌক্তিক, তা সরকারকে তদারকি করতে হবে।

চিনির দাম বৃদ্ধি ভিন্নমতও আছে। পত্রিকান্তরে একজন ব্যবসায়ী নেতা বলেছেন, দেশে এখন চিনির কোনো ঘাটতি নেই। তবু বাড়তি উৎপাদন খরচ ও বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে হঠাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণ চিনি ১৮০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে মিলগুলো। টিসিবির একজন পরিচালকও বলেছেন, বাজারে পর্যাপ্ত চিনি রয়েছে। টিসিবির কাছেও চিনির ভালো মজুদ আছে। হঠাৎ চিনির দাম বৃদ্ধির পেছনে কোনো ব্যবসায়িক ইস্যু থাকতে পারে। সরকারি চিনিকলগুলোর উৎপাদন কমে যাওয়া ও চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার গুজব ছাড়াও ডিলারবহির্ভূত প্রতিষ্ঠানের কাছে চিনি বিক্রির কারণেও দামে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

আমরা মনে করি, যৌক্তিক কারণ ছাড়া চিনিসহ কোনো নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির অপচেষ্টা রোধে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। এমনিই কভিডকালে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সীমিত আয়ের মানুষ বিপাকে আছে। কেউ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার অস্থিতিশীল করতে চাইলে শূন্য সহনশীলতায় কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।