চিনির দাম এক মাস আগে প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হলেও তা মানেননি ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে খোলা চিনি ১৩৫ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবার সরকারিভাবে খোলা চিনির দাম ১৪০ টাকা এবং প্যাকেটের চিনির দাম ১৫০ টাকা নির্ধারণের জন্য ট্যারিফ কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশ শুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
রোববার সচিবালয়ে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা-বিষয়ক টাস্কফোর্সের সভা হয়। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাণিজ্য সচিব। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীরা যে তা মানেননি, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মূলত ব্যবসায়ীদের পক্ষেই কথা বলেন তিনি।
কয়েক দিন ধরেই চিনির বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দরে চিনি বিক্রি হচ্ছে বাজারে। সরবরাহ সংকটের কথা বলে গত এক সপ্তাহে দাম আরও বাড়ানো হয়েছে। সরকার-নির্ধারিত দামে বিক্রি যেখানে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, সেখানে আবার দাম বাড়ানোর প্রচেষ্টা সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়াবে বলেই ধারণা।
বাজারে চিনির ঘাটতি নেই, তবু সংকট দেখিয়ে দাম বাড়ানো হয়েছে। চিনি মজুত রেখে বাজার অস্থির করার চেষ্টা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় ব্যবসায়ীরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন।
এটি ঠিক, চলমান গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে মজুত থাকা অপরিশোধিত চিনি রিফাইন করা যাচ্ছে না। চিনির দামে কারসাজির কারণ বোধগম্য নয়। এমন নয় যে, হঠাৎ চিনির চাহিদা বেড়েছে। কেন খুচরা ব্যবসায়ীরা পরিবেশকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় চিনি সংগ্রহ করতে পারছেন না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। অনেকেই বলছেন, দেশে পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চিনি আমদানি ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
পাইকারি চিনি বিক্রির বাজারগুলোয় নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রায়ই দেখা যায়, কারসাজি শুরু হয় এখান থেকে। চিনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধেও চাহিদামতো পণ্য বাজারজাত না করার অভিযোগ রয়েছে। তারা সংঘবদ্ধভাবে কারসাজি করছে কি না, সেটিও প্রশ্ন। ইচ্ছা করেই তারা বাজারে সংকট তৈরি করলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
সরকার চিনির দাম নির্র্ধারণ করে অপরিশোধিত চিনি আমদানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করেই। এখন তারা আবার দাম বাড়ানোর দাবি করেছেন। বাণিজ্য সচিবের বক্তব্য থেকেই প্রতীয়মান হয় দাম আরও বাড়বে। চিনি গুরুত্বপূর্ণ নিত্যপণ্য না হলেও এটির ওপর অনেকের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে। চিনির দাম বাড়লে ক্ষতিগ্রস্ত হন মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও ভাসমান চা দোকানিরা। চিনি সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন ব্যবস্থার কোন পর্যায়ে কারসাজি হচ্ছে, তা চিহ্নিত করতে হবে। সরকার চিনির যে দাম নির্ধারণ করে দেবে, সে দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।