শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিশ্বে ইলেকট্রনিকস পণ্যের চাহিদা দুর্বল হয়ে যাওয়ায় গত মাসে তাইওয়ানের রপ্তানি কমেছে। চীনের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির রপ্তানি কমেছে পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, বাণিজ্যনির্ভর অঞ্চলটির রপ্তানি আরও কমবে। খবর: রয়টার্স ও সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
গতকাল মঙ্গলবার তাইওয়ানের অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, এক বছর আগের চেয়ে গত মাসে রপ্তানি কমেছে ১৯ দশমিক ১ শতাংশ। এর আগে ব্লুমবার্গের এক জরিপে জানানো হয়েছিল, তাইওয়ানের রপ্তানি কমতে পারে ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ। তাছাড়া ফেব্রুয়ারিতে স্ব-শাসিত অঞ্চলটির রপ্তানি কমে ১৭ দশমিক ১ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে তাইওয়ানের আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ১ শতাংশ, যা পূর্বাভাস ১১ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে অনেক বেশি। তবে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে চার দশমিক দুই বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার।
এ নিয়ে টানা সাত মাসের মতো তাইওয়ানের রপ্তানিতে পতন দেখা গেল। এর অন্যতম কারণ হলোÑঅর্থনৈতিক স্থবিরতা, বিশ্বজুড়ে সুদের উচ্চহার, মূল্যস্ফীতি ও চলমান ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সংকট। তবে ফেব্রুয়ারি ও মার্চে যে পতন দেখা গেছে, তা জানুয়ারির ২১ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কম।
মার্চে তাইওয়ানের ইলেকট্রনিক পণ্যবাহী জাহাজের পরিমাণ কমে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এ সময় সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি কমে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
তবে গত বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশটির রপ্তানি আয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৪০ কোটি ডলারে, যা এর আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। বরাবরের মতো এ সময় বেশি ইলেকট্রনিকস পণ্য রপ্তানি করেছে তাইওয়ান। এ সময় এক হাজার ৮৬০ কোটি ডলার মূল্যের ইলেকট্রনিকস পণ্য রপ্তানি করেছে দেশটি, যা বার্ষিক ভিত্তিতে মোট আয়ের ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে তথ্য ও যোগাযোগ পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ বা এক হাজার ৩৯০ কোটি ডলার। এ খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে ফাইভজি-সম্পর্কিত নানা ধরনের অ্যাপ, উচ্চগতিসম্পন্ন কম্পিউটার ও গাড়ির ইলেকট্রনিক পণ্য।
প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনে বিশেষ খ্যাতি রয়েছে তাইওয়ানের। এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে দেশটির সেমিকন্ডাক্টর জায়ান্ট টিএসএমসি। প্রতিষ্ঠানটি অ্যাপল ও অন্যান্য বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য চিপ সরবরাহ করে। তবে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক অস্থিরতার কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিপনির্মাতা প্রতিষ্ঠান টিএসএমসির ওপর চাপ বাড়ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে সংস্থার কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটি গত সোমবার জানিয়েছে, মার্চে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তাদের রপ্তানি কমেছে ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
মার্চে চীনে ১২ দশমিক ৯ বিলিয়ন (এক হাজার ২৯০ কোটি) ডলারের পণ্য রপ্তানি করে তাইওয়ান। এ হিসাবে গত মাসে চীনে তাদের রপ্তানি কমেছে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ, যা এর আগের মাসের চেয়েও কম। ফেব্রুয়ারিতে চীনে বার্ষিক ভিত্তিতে ৩০ দশমিক ২ শতাংশ রপ্তানি কমে।
মার্চে দেশটিতে আমদানিও কমেছে। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে যথাক্রমে ১২ দশমিক ৩ ও ৯ দশমিক ৪ শতাংশ আমদানি কমেছে।
এদিকে তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ সব টার্গেটে হামলা ও দ্বীপটিকে ঘিরে ফেলার মহড়া চালিয়েছে চীন। তাইওয়ান ঘিরে বেইজিংয়ের তিন দিনব্যাপী এ সামরিক মহড়া শেষ হয়েছে গত সোমবার। একে তাইওয়ানিজদের জন্য কড়া হুঁশিয়ারি বলে উল্লেখ করেছে চীন। গত সপ্তাহে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের যুক্তরাষ্ট্র সফরের জবাবে এ মহড়া চালিয়েছে তারা। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, এ মহড়ায় চীনা সামরিক বাহিনীর দূরপাল্লার রকেট, নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার, ক্ষেপণাস্ত্রবাহী জাহাজ, বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান, বোমারু বিমান, জ্যামারসহ আরও অনেক অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়।