চীনের কাছ থেকে এক লাখের বেশি ডোজ বিনা মূল্যে পাবে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড-১৯-এর প্রতিষেধক উৎপাদিত হলে বাংলাদেশকে এক লাখের বেশি ডোজ বিনা মূল্যে দেবে বলে জানিয়েছে চীনের কর্তৃপক্ষ। করোনার ভ্যাকসিন বিনা মূল্যে দেওয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর আরও কয়েকটি দেশে নিজেদের বলয় তৈরি করবে চীন বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।

গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্বমঞ্চে চীনের নেতৃত্বের আসনে যাওয়ার অভিলাষ ও নানামুখী তৎপরতার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে।

কভিড-১৯ প্রকোপে পুরো বিশ্ব স্থবির হয়ে যাওয়ার পর সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে এর প্রতিষেধক নিয়ে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশ ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে। সেদিক থেকে এরই মধ্যে রাশিয়া তাদের উৎপাদিত টিকার হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করেছে। পুরো বিশ্বই এখন তাকিয়ে আছে ভ্যাকসিনের দিকে।

নিউইয়র্ক টাইমসে বলা হয়েছে, চিরবৈরী প্রতিবেশী ফিলিপাইন দ্রুত চীনের করোনা ভ্যাকসিন পাবে। ভ্যাকসিন কেনার জন্য চীনের কাছ থেকে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পাবে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ। চীনের একটি কোম্পানির কাছ থেকে বাংলাদেশ পাবে এক লাখের বেশি ডোজ।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) নির্বাহী পরিচালক ডা. জন ডি ক্লেমেন্স নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, বেইজিংভিত্তিক ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সিনোভ্যাক বায়োটেক বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় চার হাজার ২০০ স্বাস্থ্যকর্মীর শরীরে তাদের ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালাবে। চীনা এই কোম্পানি বাংলাদেশকে বিনা মূল্যে এক লাখ ১০ হাজারের বেশি ডোজ দিতে রাজি হয়েছে।

বাংলাদেশে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে সহায়তা করছে আইসিডিডিআর,বি। বাংলাদেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের তুলনায় এই ভ্যাকসিনের পরিমাণ খুবই নগণ্য বলে উল্লেখ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস।

ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে অংশ নিলেও বাংলাদেশিদের অনেকেরই আশঙ্কা, উচ্চ মূল্যের কারণে করোনার ভ্যাকসিন সবার কাছে নাও পৌঁছাতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেছেন, প্যাটেন্ট ও মুনাফার কারণে যদি বিশ্বের একজন মানুষও কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে এটি হবে এই শতাব্দীর সবচেয়ে অবিচার।

বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গুরুত্বারোপ করে বলেছে, ভ্যাকসিন সরবরাহের ক্ষেত্রে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করতে চাইবে না চীন। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনকে কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবে চীন ব্যবহার করছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে বেইজিং।

দক্ষিণ এশিয়ায় বেইজিংয়ের করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের উদ্দেশ্য নিয়ে সতর্ক ভারত। নেপাল ও বাংলাদেশকে চীন ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার পর নয়াদিল্লিও মিত্রদের একই ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিছু দেশে চীনের বিকল্পও থাকতে পারে।

চীন ভ্যাকসিন উৎপাদনের একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, এখনও সেটি বলার সময় আসেনি। কিন্তু ভ্যাকসিন নিয়ে প্রতিবেশী ও বিভিন্ন অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে ভঙ্গুরপ্রায় সম্পর্ক মেরামত এবং বন্ধুদের আরও ঘনিষ্ঠ করে তোলার দিকেই চীন বেশি মনযোগ দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়। এরপর ভাইরাসটি বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দুই কোটি ৮৩ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত ও ৯ লাখের বেশি মানুষ মারা গেছে।

মহামারির তাণ্ডব অব্যাহত থাকলেও রাশিয়া ছাড়া কোনো দেশই এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আনতে পারেনি।

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে এখনও নেতৃত্বের আসনে রয়েছে চীন। দেশটির অন্তত চারটি ভ্যাকসিন শেষ ধাপের পরীক্ষায় পৌঁছেছে, যা বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি।

চীনের পরই আছে যুক্তরাষ্ট্র, দেশটির তিনটি ভ্যাকসিন শেষ ধাপের পরীক্ষায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি ফাইজার বলছে, অক্টোবরের শুরুতেই তারা করোনা ভ্যাকসিনের জরুরি ব্যবহারের অনুমতির জন্য আবেদন করবে। দেশটির আরেক কোম্পানি মডার্না চলতি বছরের শেষের দিকে ভ্যাকসিন আনার আশা প্রকাশ করেছে।

এছাড়া চীন গত জুলাইয়ে সামরিক বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য দুটি ভ্যাকসিনের জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দেশটির তৈরি ভ্যাকসিন বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের কল্যাণে উš§ুক্ত করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন।