Print Date & Time : 21 July 2025 Monday 4:58 am

চীনে শহরাঞ্চলের এক-পঞ্চমাংশ তরুণ বেকার

শেয়ার বিজ ডেস্ক: কভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে চীনে বেকারত্ব বেড়েছে। দেশটির শহরাঞ্চলের পাঁচ তরুণের একজন বেকার হয়ে পড়েছেন। খবর: সিএনএন।

গত বছরের মে মাসে উহানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সময় চীনের শিক্ষার্থী চেরি একটি বৃহৎ সফটওয়ার ফার্মে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পান। প্রতিষ্ঠানটি তখন জানিয়েছিল, স্নাতকোত্তর সম্পন্ন হওয়ার পর চেরি এখানে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন। তবে চলতি গ্রীষ্মে নাটকীয়ভাবে সেই পরিস্থিতি বদলে যায়। প্রতিষ্ঠানটির তরফ থেকে চেরিকে জানানো হয়েছে, তার নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। ব্যবসায়িক অবস্থার উন্নতি ও কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

চীনের বেসরকারি খাতে এই পরিস্থিতির শুরু হয় ২০২০ সালের শেষের দিকে। বিশেষ করে শূন্য কভিড নীতির প্রভাব পড়ে দেশের অর্থনীতি ও শ্রমবাজারের ওপর। এমন একটি সময়ে যখন রেকর্ড প্রায় দেড় কোটি কলেজ গ্র্যাজুয়েট শ্রম বাজারে প্রবেশ করলেন, যখন দেশটির অর্থনীতি সংকুচিত হচ্ছে। চলতি বছর তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। মার্চের ১৫ দশমিক ৩ শতাংশের তুলনায় এপ্রিলে রেকর্ড ১৮ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে বেকারত্ব। গত জুলাইয়ে এই হার দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৯ শতাংশে। গত মাসে এ হার কিছুটা কমে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে এ হার এখনও বাড়তির দিকে বলে জানিয়েছে দেশের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস।

অর্থাৎ বর্তমানে শহরে বসবাসকারী ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী প্রায় ২ কোটি কর্মক্ষম মানুষের কাজ নেই। দেশের শহরে বাস করছেন ১০ কোটির বেশি এই বয়সের মানুষ। অফিশিয়াল স্ট্যাটিসটিকসের ওপর ভিত্তি করে এ সংখ্যা প্রকাশ করেছে সিএনএন। তবে এতে গ্রামের তরুণ বেকারদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির জেমসটাউন ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ ফেলো উইলি ল্যাম বলেন, গত চার দশকের মধ্যে চীনের শ্রমবাজার বর্তমানে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কমিউনিস্ট পার্টির জন্য এই গণবেকারত্ব ভীষণ চ্যালেঞ্জের। তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও চাকরির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা পার্টির অন্যতম নির্বাচনী এজেন্ডা।

চীনে প্রযুক্তি খাতের সংকট বেশ দৃশ্যমান। সরকারি বিধিনিষেধ ও চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে খাতটি ভুগছে। অথচ দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির অন্যতম খাত ছিল এটি। এই খাতে চাকরি উচ্চ আয় করতেন অনেক তরুণ। তাদের বেশিরভাগ চীনের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেছেন। তবে এখন বেশিরভাগ বৃহৎ প্রতিষ্ঠান কর্মী নিয়োগ দেয়ার হার অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় কমিয়ে দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সবার আগে আসে আলিবাবার কথা। জায়ান্টটি সরকারের রোষানলে পড়ে পাবলিক কোম্পানি হওয়ার আট বছর পর চলতি বছর আশানুরূপ রাজস্ব আয় করতে পারেনি। এমনকি বছরের প্রথম ছয় মাসে ১৩ হাজারের বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৪ সালে নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয় আলিবাবা। সামাজিক মাধ্যম ও গেমিং জায়ান্ট টেনসেন্ট বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৫ হাজার পাঁচশর বেশি কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছে। এক দশকের মধ্যে এবারই প্রথম এমন ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রযুক্তি খাত থেকে কর্মী ছাঁটাইয়ের বিষয়টি বোধগম্য নয় বিশ্লেষকদের কাছে। এই খাতটিকে চীনের উন্নয়নের পরবর্তী ধাপ বলে উল্লেখ করেছিলেন দেশটির প্রধান শি জিনপিং। তবে এটা পরিষ্কার যে,

ছাঁটাইয়ের কারণে দ্বৈত সমস্যায় পড়ছে চীনÑঅনেক কর্মী নিজেদের বেকার হিসেবে আবিষ্কার করছেন এবং প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ কর্মীর অভাবে উদ্ভাবনী শক্তি থেকে পিছিয়ে পড়ছে, যা পশ্চিমা প্রতিযোগীদের তুলনায় চীনকে পিছিয়ে দিচ্ছে। প্রযুক্তির খাতের পাশাপাশি বেসরকারি সব খাতে কর্মী ছাঁটাই চলছে, যা  শি জিন পিং ও সরকারের প্রধান সমস্যা। যদিও বেকারত্ব দূর করা সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। চলতি বছর চীন মধ্যবিত্তদের অভূতপূর্ব বিক্ষোভের সাক্ষী হয়েছে। আবাসন খাতে সংকট বেড়ে যাওয়ায় ও নির্মাতারা সময়মতো বাড়ি নির্মাণ শেষ করতে না পারায় দেশের অনেক ক্রেতা বাড়ি বন্ধক রেখে দেনা পরিশোধ করা বন্ধ করে দিয়েছেন। উপরন্তু মধ্যাঞ্চলের অনেক ব্যাংক গ্রাহক তাদের সঞ্চয় নিয়ে সমস্যায় পড়েন, যে কারণে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন অনেকে।