চীনে সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি কমাতে চায় জাপান

শেয়ার বিজ ডেস্ক: চীনে সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কাজ করছে জাপান সরকার। চীনে রপ্তানির ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায় এ পদক্ষেপ নিতে চায় জাপান। খবর: এনএইচকে।

ওয়াশিংটন গত অক্টোবরে ঘোষণা দিয়েছিল, গণবিধ্বংসী অস্ত্র ও অগ্রসর সামরিক ব্যবস্থার বিকাশে ব্যবহার করা যায়, এমন উন্নত সেমিকন্ডাক্টর ও নির্মাণ সরঞ্জাম চীনে রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।

জাপান ও নেদারল্যান্ডসের প্রতিনিধিরা গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। বৈঠকের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করা না হলেও ধারণা করা হচ্ছে, এতে চীনে রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ-সংক্রান্ত আলোচনা হয়েছে। উভয় দেশ সেমিকন্ডাক্টর তৈরিতে ব্যবহƒত সরঞ্জাম উৎপাদনের ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে।

উল্লেখ্য, বিদেশি বিনিময় ও বাণিজ্য আইনের অধীনে শিল্প খাতের পণ্য রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে জাপান। সামরিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রীর অনুমোদন নেয়ার প্রয়োজন হয়। জাপানি নির্মাতাদের ওপর প্রভাবের পাশাপাশি সম্ভাব্য চীনা প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি যথাযথভাবে বিবেচনায় নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন উপাদানগুলোর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

গত বছরের অক্টোবরে ওয়াশিংটন রপ্তানির ওপর নিয়ন্ত্রণ জারি করে। এ কারণে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের যেকোনো প্রতিষ্ঠান চিপ, চিপ তৈরির সরঞ্জাম ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি-সংবলিত সফটওয়্যারগুলো চীনের কাছে বিক্রি করতে পারবে না। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার অজুহাতে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অপব্যবহার করছে। চিপের মতো স্বাভাবিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাধা দিচ্ছে, সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিশীলতার ওপর হুমকি সৃষ্টি করেছে, আন্তর্জাতিক আর্থ-বাণিজ্যিক নিয়মাবলি লঙ্ঘন করেছে, মৌলিক অর্থনৈতিক নিয়ম লঙ্ঘন করছে এবং বিশ্ব শান্তিতে বাধা দিচ্ছে। একে বাণিজ্য সংরক্ষণবাদী আচরণ বলে অভিহিত করে চীন।

সেমিকন্ডাক্টর বা চিপÑসিলিকনের এ ক্ষুদ্র টুকরোগুলোকে কেন্দ্র করে বিশ্বে ৫০০ বিলিয়ন (৫০ হাজার কোটি) ডলারের বিশাল ব্যবসা রয়েছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠান এ প্রযুক্তির সাপ্লাই চেইন নিয়ন্ত্রণ করবে, বিশেষ করে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ও দেশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে, তারাই অপ্রতিদ্বন্দ্বী পরাশক্তি হওয়ার চাবিকাঠি ধরে রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

চিপ তৈরির প্রযুক্তি পেতে মরিয়া চীন। এ কারণে এ প্রযুক্তির অন্যতম প্রধান উৎস যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে ছেঁটে ফেলতে চায়। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে এ দুটি দেশ কার্যত প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এ প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে থাকলেও চীনের বিরুদ্ধে এ চিপযুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে নতুন আকার দিতে চলেছে।

কেননা সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন করা বেশ জটিল। একই সঙ্গে এটি উৎপাদন করতে দক্ষ বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন।

সেমিকন্ডাক্টর উদ্ভাবন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব এশিয়া উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, বিশেষ করে এ শিল্পে ভর্তুকিসহ অন্যান্য সরকারি প্রণোদনার কারণে। এক্ষেত্রে বলা যায় চীনের কথা। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের সামনে এ শিল্প চমৎকার কাজ করছে।

যুক্তরাষ্ট্র আরও চিপ তৈরি করতে চায়। দেশটিতে সেমিকন্ডাক্টর প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৫৩ বিলিয়ন (পাঁচ হাজার ৩০০ কোটি) ডলার অনুদান ও ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। এছাড়া তাইওয়ানের টিএসএমসি যুক্তরাষ্ট্রে দুটি কারখানায় ৪০ বিলিয়ন (চার হাজার কোটি) ডলার বিনিয়োগ করেছে।

এদিকে জাপানের প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্প-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জাপানের সেমিকন্ডাক্টর শিল্প পুনরুদ্ধারের জন্য সবশেষ ও বড় সুযোগ হতে পারে ২০৩০ সাল। ২০২২ সালে দেশটির সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকারী তোশিবা, সনিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এক সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে চিপ উৎপাদন খাত পুনরুজ্জীবিত করতে জাপান সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, প্রকৌশলীদের সংকটে সেটি ব্যাহত হতে পারে। মূলত কভিড-১৯ মহামারির কারণে সরবরাহ শৃঙ্খলে যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে দেশের সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান সরকার।

১৯৮০ সালের শেষের দিকে জাপানের সেমিকন্ডাক্টর প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ করে। এর মাধ্যমে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে বিশ্ববাজারের অর্ধেকের বেশি দখলে নেয়। কিন্তু ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধের পর দেশটি দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান এমনকি চীনের কাছেও তাদের অবস্থান হারায়। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন ক্ষমতা ও উন্নত চিপ তৈরিতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন।