চুড়িহাট্টার আগুনে হতাহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: এক বছর আগে রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা। গতকাল শুক্রবার ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে পাঁচটি সামাজিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘ঐক্যবদ্ধ সকল সামাজিক সংগঠনের’ ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। সেই সঙ্গে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থের গুদামগুলো সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নেওয়ার দাবিও উঠেছে। সংবাদ সম্মেলনের পর নিহত-আহদের পরিবার-স্বজনসহ ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে একটি মানববন্ধন করা হয়।

সংগঠনটির আহ্বায়ক ও অগ্নিকাণ্ড নিহতদের দুজনের স্বজন এমএ রহিম বলেন, ‘চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির এক বছর অতিবাহিত হয়ে গেল। অথচ নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো কীভাবে আছে খোঁজ নেওয়ার লোক পাইনি, পাইনি কোনো সরকারি সাহায্য সহযোগিতা। কিন্তু অসহায় পরিবারগুলো দিন দিন ভিটাবাড়ি বিক্রি করে নিঃস্ব।’

এ সময় আর্থিকসহ অন্যান্য সহায়তা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানানো হয়। আগুনে আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা, ক্ষতিগ্রস্ত ওয়াহেদ ম্যানশন মেরামতের সুযোগ দিয়ে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার ব্যবস্থা করা, নিহতদের পরিবারের চিকিৎসা ও পড়াশোনার ব্যয় বহন এবং অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের দাবিও জানানো হয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের ৩১ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও যোগ্যতা অনুসারে চাকরির ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। এ বিষয়ে রহিম বলেন, ‘৩১ পরিবারকে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা এবং কোনো পরিবারের যোগ্য ব্যক্তিকে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছেন মেয়র। আমরা মেয়রের এই আশ্বাসে বিশ্বাস করছি। কিন্তু অন্য পরিবারগুলোর সহায়তা পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা এখনও হয়নি। বাংলাদেশ প্লাস্টিক ব্যবসায়ী সমিতি নিহতদের পরিবারগুলোকে ৫০ হাজার টাকা করে সহযোগিতা করেছে। আর চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে যারা আহত হয়েছিলেন তাদের তাৎক্ষণিক যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল, তারপর সরকারি সহায়তায় আর কোনো চিকিৎসা হয়নি।’

রহিমের দুই ভাতিজা মাসুদ রানা ও মাহবুবুর রহমান রাজু ওয়াহেদ ম্যানশনে ‘এম আর টেলিকম’ নামে দোকান চালাতেন। দুই ভাই-ই আগুনে মারা যান। তাদের বাবা সাহেব উল্লাহ বলেন, ‘আমার দুই ছেলে আগুনে মারা গেছে। এখন পরিবারে দুই ছেলের স্ত্রীসহ আমরা সাত সদস্য আছি, ছেলেদের হারিয়েছি, ব্যবসা হারিয়ে এখন যে বেঁচে আছি খুব অসহায় দিন যাপন করতে হচ্ছে। একটি বছর হয়ে গেছে আর কেউ আমাদর পাশে এসে দাঁড়ায়নি।’ সুলতানা কামাল বলেন, ‘সরকারের কাছে ওই আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৩০ কোটি টাকা সহায়তা এসেছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাই, আপনি এই টাকা বিলম্ব না করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে দিয়ে দেন।’

আগুনে নিহত ওয়াসিউদ্দিন মাহিদের চাচাতো ভাই আশিক উদ্দিন সৈনিক বলেন, ‘আমরা যারা এখানে আছি তারা কেউ কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞ নয়। ওই ভবনে ক্ষতিকর কী কেমিক্যাল ছিল তা আমরা জানি না। তবে আমি দেখেছি, বিস্ফোরণে ওই ভবনের দেয়াল উড়ে আশেপাশের ভবনগুলোয় পড়েছে।’

ওয়াহেদ ম্যানশনের আগুনে নিহত মো. জুম্মনের ছেলে ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলার বাদী মো. আসিফ বলেন, ‘আমি বাবাকে হারিয়েছি। এর যে কত ব্যথা কেবল আমিই বুঝি। যে কারণে আমার বাবাসহ অন্য যারা মারা গেছেন, সেই কেমিক্যালের কোনো মজুত এখানে যাতে রাখা না হয়, সেই বিষয়ে সরকার থেকে যেন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।’

প্লাস্টিক ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এই অগ্নিকাণ্ডের পর পুরান ঢাকার বিভিন্ন গুদাম থেকে ক্ষতিকর ৩২ ধরনের কেমিক্যাল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন যেগুলো আছে, সেগুলো ক্ষতিকর নয়। তারপরও যদি সরকার মনে করে কোনো কেমিক্যাল সরানো দরকার তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’

উল্লেখ্য, রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ওয়াহেদ ম্যানশনের আগুনে ঘটনাস্থলে ৬৭ জন মারা যান। পরে আহতদের মধ্য থেকে আরও চারজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যায়।