Print Date & Time : 5 September 2025 Friday 10:21 am

চুয়াডাঙ্গায় ফিলিপাইনের আখ চাষে কৃষকদের ভাগ্যবদল

মফিজ জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা: বাণিজ্যিকভাবে চুয়াডাঙ্গায় চাষ হচ্ছে ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ। বাজারে এ জাতের আখের চাহিদা থাকায় কৃষকরা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আখ চাষে খরচ বাদে প্রতি বিঘায় লাভ হয় প্রায় দেড় লাখ টাকা। এ ধরনের আখ বাজারে প্রচলিত আখ থেকে ভিন্ন হওয়ায় ক্রেতাদের এর চাহিদা রয়েছে। আখ লম্বায় বড় হওয়ায় বাঁশের মাচা দিতে হয়। চুয়াডাঙ্গায় আখের চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায়ও বিক্রি হচ্ছে ফিলিপাইনের কালো আখ।

সদর উপজেলার শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের দিননাথপুর গ্রামের কৃষক হারিছ চৌধুরী ২০১৮ সালে প্রথম ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ চাষ করেন। তিনি উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে এ জাতের আখের চারা পান। প্রথমে তিন কাঠা জমিতে পরীক্ষামূলক আখ চাষ করেন। ফলন, আখের মান, বাজারে চাহিদা ও লাভজনক হওয়ায় পরের বছর সাড়ে চার বিঘা জমিতে চাষ করেন। তিনি আখের চারা তৈরি করে জেলার অন্য কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন। অনেক কৃষক এ আখ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। প্রতি পিস আখের চারা ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষকরা চারা নিয়ে যাচ্ছেন।

এক বিঘা জমিতে আখ চাষের জন্য ২৫০০ চারা রোপণ করতে হয়। এখান থেকে প্রায় ১০ হাজার পিস আখ পাওয়া যায়। একটি গাছ থেকে ৯ থেকে ১১টি আখ পাওয়া যায়। আখ চাষ করতে হয় উঁচু জমিতে। জমি ভালোভাবে চাষ দিতে হয় প্রথমে। তারপর লম্বা সারি করে চারা রোপণ করতে হয়। নিয়মিত ক্ষেত পরিচর্যা করতে হয়। রোগ বালাই

তুলনামূলক কম। আখ রোপণের ১০ মাস পর বাজারে বিক্রির উপযুক্ত হয়।

বর্তমানে জেলার চারটি উপজেলায় ১০০ বিঘা জমিতে আখ চাষ হচ্ছে। আখের গায়ের রঙ কালো হলেও ভেতরের রঙ সাদা।

আখ ক্ষেতের শ্রমিক আরশেদ বাবু বলেন, হারিছের আখ ক্ষেতে নিয়মিত কাজ করি। আগাছা পরিষ্কার, পাতা কাটা, সার ও কীটনাশক ছিটাই। দিন হাজিরা ৩০০ টাকা পাই।

হারিছ চৌধুরী বলেন, প্রথমে অল্প জমিতে এ জাতের আখ চাষ করি। আখের ফলন ভালো হওয়ায় চাষে আগ্রহ দেখাই। বড় পরিসরে আখ চাষ করার জন্য নিজেই চারা তৈরি করে সাড়ে চার বিঘা জমিতে এ মৌসুমে আখ লাগাই। ছয় লাখ টাকা লাভ হতে পারে।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বুজরুকগড়গড়ি গ্রামের আখ কৃষক সোহান আলী বলেন, দুই বিঘা জমিতে ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ চাষ করেছি। চারার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে অন্য কৃষকদের কাছে। আখ চাষ লাভজনক। নতুন উদ্যোক্তারা আখ চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারবেন।

বোয়ালমারী গ্রামের কৃষক মিলন হোসেন বলেন, লাভজনক জেনে দুই বছর আগে আখবীজ সংগ্রহ করেছি। একবিঘা জমি লিজ নিতে ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শিয়াল থেকে আখ বাঁচাতে তারের নেট কিনতে হয়েছে। এছাড়া বাঁশ কেনা ও শ্রমিকসহ খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা।

তিনি জানান, কার্তিক মাস আখ চাষের উপযুক্ত সময়। পুরো এক বছর সময় লাগে আখ চাষে। প্রথম বছর আখ কাটার পর প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করলে আরও এক বছর আখ পাওয়া যায়।

ঢাকার সাভারের আখ ক্রেতা জলিল ব্যাপারী বলেন, চুয়াডাঙ্গায় কালো জাতের আখ বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এর চাহিদা রয়েছে। তিন হাজার পিস আখ কিনে ট্রাকযোগে সাভারে নিচ্ছি। প্রতি পিস আখ ২৫ থেকে ৩০ টাকা লাভে বিক্রি করতে পারব। কারণ আখগুলো অনেক লম্বা ও মোটা।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, জেলার কৃষকরা নতুন

ফসল চাষে আগ্রহী। ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ চাষ হচ্ছে। চিবিয়ে খাওয়ার মতো একটি আখ। কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।