প্রতিনিধি, মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) :সুনামগঞ্জের নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে অবাধে আসছে ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস, কসমেটিক্স, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন পণ্য। এসব মালামাল চোরাচালানিদের বিভিন্ন হাত ঘুরে দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বিঘেœ পৌঁছে যাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার ভারতের সীমান্তবর্তী উত্তর বংশীকুণ্ডা ইউনিয়নের আন্তরপুর গ্রাম, মহেষখলা, কাইতাকুনা, কড়ইবাড়ী, গুলগাঁও, রূপনগর ও কান্দাপাড়া গ্রামের একটি সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্র স্থানীয় বিজিবিকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে এসব পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন সময় বিজিবির করা মামলা ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, উত্তর বংশীকুণ্ডা ইউপির মহেষখলা গ্রামের এরশাদ মিয়া, আলমগীর মিয়া, সাদ্দাম, ফারুক মিয়া, নজরুল, রঞ্জু মিয়া; বানরা গ্রামের হোটেল মালিক আমিরুল ইসলাম, গোলগাঁও গ্রামের হাতমত, রুবেল মিয়া, শরিফ মিয়া, মাটিয়ারবনের আল আমিন, কুরফান আলী, লতিফ, আফাজ, আছব আলী, জব্বার আয়নাল, শফিকুল, বাসেদ, মিস্টার মিয়া, মজিদ হারিছ উদ্দিন, সুলতান মিয়া, নবাবপুর গ্রামের মো. করিম মিয়া, রাজন মিয়া, অন্তপুর গ্রামের দিলু মিয়া ও লক্ষ্মীপুর গ্রামের করজুল ইসলাম, কড়ই বাড়ির গ্রামের আতাবুর গুক্কুর, খোকন, রংপুর গ্রামের নয়ন মিয়া, আবুল মিয়া, সাউত পাড়া গ্রামের কাদির মিয়া ও ছাত্তার মিয়ার ছেলে হযরত আলীসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র এ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে খুব দাপটের সঙ্গে ভারতীয় মাদকদ্রব্য, ভারতীয় শাড়ি, লেহেঙ্গা ও কসমেটিক, গরু, চিনিসহ বিভিন্ন মালামাল পাচার করছে। এ চক্রটি রাতের অন্ধকারে শাড়ি, লেহেঙ্গা, কসমেটিক, গরু ও মাদক, চিনি, চায়ের পাতা, চালসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে এলাকার চাহিদা পূরণ করে মধ্যনগর বাজার, ধর্মপাশা উপজেলা সদর, কলমাকান্দা, মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা নেত্রকোনা তাহিরপুর ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিচ্ছে। বডার গার্ড ও থানা পুলিশ বিভিন্ন সময়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করলেও তারা এসব ব্যবসা চালিয়েই যাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাঁকাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক জানান, যেভাবে প্রতিদিন শাড়ি, লেহেঙ্গা, কসমেটিক, গরু, মদ, গাঁজা, ইয়াবা ও চিনি আসছে, তাতে এলাকার যুবসমাজ ধ্বংসের দিকে চলে যাবে। তিনি আরও জানান, চক্রটি এত ক্ষমতাশালী যে প্রশাসনসহ সবাই তাদের ইশারায় ওঠে ও বসে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে এলাকার কেউ কথা বলার সাহস পায় না। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
উত্তর বংশীকুণ্ডা ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুরনবী তালুকদার বলেন, ‘আমার এলাকায় কোনো কলোবাজারি সিন্ডিকেট আছে বলে জানা নেই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’
এ বিষয়ে বিজিবির মোহনপুর ক্যাম্পের ইনচার্জ নায়েক সুবেদার মো. আইনুল হক বলেন, ‘সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা রক্ষায় তারা তৎপর রয়েছেন। তারা চোরাকারবারিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।’
এ বিষয়ে বিজিবির মাটিয়াবন ক্যাম্পের ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা নায়েক সুবেদারকে ফোন করা হলে তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অজুহাত দেখিয়ে তিনি সংযোগ কেটে দেন।
এ বিষয়ে বিজিবির বাঙ্গালভিটা ক্যাম্পের ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা নায়েক সুবেদার মো. কাদিমুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এ ক্যাম্পে মাত্র ছয় বিজিবি সদস্য নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত আছে। আমরা নিয়মিত এলাকায় টহল দিয়ে যাচ্ছি। চোরাচালানের মাধ্যমে হয়তো ফাঁকে ফাঁকে কিছু মাল নিয়েও আসতে পারে।’
মধ্যনগর থানার ওসি মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে বিজিবির তিনটি ক্যাম্প রয়েছে। এসব বিষয় তারাই দেখে। আমরাও তৎপর রয়েছি।’
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবির) ২৮ সুনামগঞ্জের অধিনায়ক মো. মাহবুবুর রহমানের ব্যবহƒত সরকারি মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলো তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবির) ৩১ নেত্রকোনার অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে খতিয়ে দেখবেন।